রাজধানীর পুরান ঢাকার আজিমপুর ‘এ’ ব্লকের চারতলা একটি ভবন। এই ভবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এর ভেতরে একটি শোয়ার ঘর নিচে ও আরেকটি ওপরে। নিচের কক্ষে একটি রান্নাঘর এবং শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু ওপরের কক্ষে শুধু শোয়ার কক্ষ। আর শুধু সেই কক্ষে যাওয়ার জন্যই আলাদা করে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সিঁড়ি। এমন বিচিত্র নকশার কারণেই মূলত লোকমুখে ভবনটি পরিচিতি পেয়েছে ‘আজব ভবন’ নামে।
আজব ভবনটি ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিল গণপূর্ত আজিমপুর বিভাগ। কিন্তু এতে বাধা দিয়ে স্থাপত্য অধিদপ্তর বলছে, ভবনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে। এটি না ভেঙে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তর মনে করছে, পুরোনো এই ভবনটি ভেঙে নতুন স্থাপনা করা যেতে পারে। ভবনটি পাকিস্তান আমলে ‘এমএলএ হাউস’ নামে পরিচিত ছিল বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি খালি করা হয়েছে এই ‘আজব ভবন’। সেখানকার বাসিন্দাদের আজিমপুর বি-ব্লকে ফ্ল্যাট দেওয়া হয়েছে। এক সময়ে ওই ভবনে বসবাসকারী মনিকা আক্তার জানালেন, ভবনটির নিচের কক্ষে একটি শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর ও শৌচাগার রয়েছে। তবে ভবনের ভেতরে সিঁড়ির ওপরে আরেকটি শোয়ার কক্ষ রয়েছে। এ কারণে এটি আজব ভবন নামে পরিচিতি পেয়েছে।
আজিমপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ‘এ’ ব্লকটি আজিমপুর কলোনির উত্তর পাশে অবস্থিত। এই ব্লকের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে একটু দূরেই ৭৫ নম্বর ভবন, যা আজব ভবন নামে পরিচিত। বর্তমানে এ ব্লকে ১৫টি বহুতল ভবন নির্মাণ করতে পুরোনো দালান ভাঙার কাজ চলছে।
গত ১২ ডিসেম্বর স্থাপত্য অধিদপ্তরের সার্কেল-৩, বিভাগ-৮-এর নির্বাহী স্থপতি সাব্বির আরেফিন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী স্থপতি লুই আই কান কর্তৃক প্রণীত জাতীয় সংসদ ভবন এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত স্থাপত্য আচার্য্য মাজহারুল ইসলামের নকশাকৃত বেশকিছু প্রকল্প তালিকাভুক্ত করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ইউনেসকোর কাছে আবেদন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংশোধিত নকশায় ৭৫ নম্বর ভবনটিকে সংরক্ষণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আজিমপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে জানান, আজব ভবন নামে খ্যাত এই স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু স্থাপত্য অধিদপ্তরের আপত্তির কারণে সেটি ভাঙা হচ্ছে না। তবে ভবনটি সংস্কার করা হবে।