নিজে প্রতিবন্ধী হয়েও প্রতিবন্ধী দুই ভাই-বোনসহ সাত সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন জুয়েল। করুণা নয়, পরিশ্রম করে বাঁচতে তাঁদের দরকার একটু সহযোগিতা। আর প্রতিবন্ধী তিন সন্তানের চিকিৎসায় সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে মা-বাবার চাওয়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। যেন তাঁদের মৃত্যুর পর কারও কাছে হাত পাততে না হয়।
আতিকুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘একটু হাঁটাচলা করতে পারার পর বাবার সঙ্গে দোকান করতাম। কিন্তু করোনায় দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক কিনি। যা আয় হয়, তাই দিয়ে কোনো মতে সংসার চলছে।’
জানা যায়, দিনাজপুর সদর উপজেলার জালালপুর শাহপাড়া এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলামের তিন সন্তান। বড় ছেলে আতিকুর রহমান জুয়েলের বর্তমান বয়স ৩৬ বছর। বয়স যখন ১৭ মাস তখন কোনো কারণে তাঁর হাত ভেঙে যায়। সেই থেকে সময়ে-অসময়ে ভাঙতে থাকে হাত-পা। তাঁর যখন দুই বছর বয়স তখন জন্ম হয় একমাত্র বোন রোজিনা আক্তারের। ঠিক একই বয়সে গিয়ে একই সমস্যা দেখা দেয় তাঁরও।
পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী চলে চিকিৎসা। বন্ধ হয়ে যায় শারীরিক বৃদ্ধি। ১০ বছর বয়সে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এক মাস ভর্তি থাকার পরেও ধরা পড়েনি কোনো রোগ। শরীরে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তবে তখন তাঁরা জানিয়েছিলেন, বয়স ২০ পার হলে সুস্থ হয়ে হাঁটাচলা করতে পারবে। বর্তমানে জুয়েল লাঠির সাহায্যে চলতে পারলেও ছোট বোনের শরীর কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত নিশ্চল। একই অবস্থা অপর সন্তান ১৪ বছর বয়সী রাহাত বাবুর। উঠে বসার শক্তিও নেই তার।
এদিকে, তিন প্রতিবন্ধী সন্তানের দুশ্চিন্তায় চোখের জলে দিন কাটে মা-বাবার। কাঁদতে কাঁদতে চোখে কম দেখেন বাবা রেজাউল ইসলাম। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা আহেদা বেগমও।
তাঁরা বলেন, ‘এখন হামরা বাঁচি আছি, কষ্ট হইলেও ছোয়াগুলাক দেখি থোছি। হামরা না থাকিলে যে কী হবে।