হলিউডের নামী নায়ক সিলভেস্টার স্ট্যালন ‘রকি’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন ১৯৭৬ সালে। ছবিটি সিনেমাপ্রেমী মানুষদের আকৃষ্ট করেছিল। দর্শকপ্রিয়তায় আশান্বিত হয়ে রকিকে নিয়ে একের পর এক সিনেমা নির্মাণ করা হয়।
রকি একজন মুষ্টিযোদ্ধা। সংগ্রামী জীবন তার। একসময় সে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়। হলিউডি চলচ্চিত্রে জিরো থেকে হিরো হওয়ার ঘটনা কম নয়। আমাদের দেশেও হয়তো এ ধরনের চমক আছে। জিরো থেকে হিরো হওয়াদের ঘটনাগুলো জানতে হলে ঋণখেলাপি, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী, এমএলএম ব্যবসায়ী, পরিবহননেতাসহ অনেকের কাছেই ধরনা দিতে হবে। তারা জানে কীভাবে সফল হতে হয়। চাইলে হলিউডের ছবির জন্য গল্প ও চিত্রনাট্য লেখেন যাঁরা, তাঁরা বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে পারেন। ছবি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দেবে—এই গ্যারান্টি দেওয়া যায়।
মুশকিল হলো, হলিউডের সিনেমার নায়কের সঙ্গে নামের মিল থাকলেই কেউ নায়ক হয়ে যাবে—এমন নয়। যশোরের চৌগাছার রাব্বি হাসান রকিও পারেননি। তিনি যে কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন, তাতে কোনো অন্যায় ছিল না। ৩৩ বছর বয়সী এই রাজমিস্ত্রি ধর্মতলা রেললাইনের কাছে চার রাস্তার মোড়ে দেখতে পান বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এক যুবক। তিনি যুবককে মোটরসাইকেল আস্তে চালাতে বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন যুবক। এরপর জনা পনেরো-বিশ যুবককে ডেকে এনে আচ্ছাসে ধোলাই দেন রকিকে। আমাদের বেচারা রকির কবজিতে সিলভেস্টার স্ট্যালনের জোর ছিল না, তাই কী থেকে কী হয়ে গেল, তা বুঝে ওঠার আগেই রকিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান ওই যুবকেরা।
হলিউডি ছবির গল্পকার বা চিত্রনাট্যকারেরা গল্পের এই অংশটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারলে ভালো কোনো চলচ্চিত্রের সম্ভাবনা আবিষ্কার করতে পারতেন। আমাদের রাজমিস্ত্রি রকি মার খাওয়ার সময় দুর্বৃত্তদের চিনে রাখতে পারতেন তাঁর ফটোগ্রাফিক মেমোরির কল্যাণে। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এক এক করে যুবকদের কাছে যেতেন এবং শায়েস্তা করতেন। এ সময় কি একটি সুশ্রী মেয়ে ওর প্রেমে পড়ে যেত না? অবশ্যই যেত এবং কী করে এই মোটরসাইকেলওয়ালাকে শাস্তি দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলাপ করত রকির সঙ্গে। ও হ্যাঁ, ছবিকে আরও আকর্ষণীয় করতে হলে এই কল্পিত মেয়েটির সঙ্গে মোটরসাইকেলওয়ালার একটা হাঙ্গামা বাধিয়ে দেওয়া যেত। এমনকি ধর্ষণের অপচেষ্টার দৃশ্য সিনেমা হলে দর্শক টেনে আনতে পারত। তখন মুশকিল আসান হয়ে আবির্ভাব হতো আমাদের রকির।
দুর্ভাগ্য আমাদের। দুর্ভাগ্য রাজমিস্ত্রি রকিদের। স্রেফ রাস্তার নিয়মকানুন মেনে চলতে বলায় ওকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করল কিছু দুর্বৃত্ত। এরপর রকি কিংবা এ ঘটনার কথা শোনার পর কে আর অযথা নিয়ম মেনে চলতে বলে বিপদে পড়ার ঝুঁকি নেবে? এই দুর্বৃত্তরা রাস্তাঘাটে এমন দাপটের সঙ্গে চলতে পারছে কীভাবে, সেটাই তো জিজ্ঞাস্য আমাদের। শাস্তি হোক এই দুর্বৃত্তদের। হলিউডি গালগপ্পে নয়, বাস্তব জীবনেই শাস্তির মুখোমুখি হোক এরা।