রাত পোহালেই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তাই শেষমুহূর্তে প্রার্থীরা প্রচার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তাঁরা। তবে নির্বাচনে অন্য কোনো দল অংশ না নেওয়ায় নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গেই করতে হচ্ছে ভোটযুদ্ধ। চলেছে গ্রুপিং ও লবিং।
অন্যদিকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের নিজস্ববলয়ের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। আগামীকাল ১৭ অক্টোবর ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
টাঙ্গাইল: জেলায় ৪০ জন সাধারণ সদস্য ও ১১ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন; কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখতে না পেরে তাঁরা ভোটের মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলমগীর খান মেনু ও যুগ্ম সম্পাদক আহমেদ মজিদ সুমন। ফলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক চেয়ারম্যান পদে পুনরায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের দিকে এগিয়ে চলেছেন।
এদিকে মধুপুর আসনে অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন ও আমিনুল ইসলাম বাবলু প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় সদস্য পদে নির্বাচিত হচ্ছেন। তবে বাকি ১১ আসনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন দলীয় সমর্থন বঞ্চিতরা।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, ১২টি উপজেলার ১২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। ১ হাজার ৭২২ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
জামালপুর: নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মুহাম্মদ বাকীবিল্লাহ্ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১ এবং সাধারণ সদস্য পদে ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুজন সদস্য পদের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, নির্বাচন ঘিরে এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলার সাতটি উপজেলার ছয়টি ভোটকেন্দ্রে ৯৯৮ জন ভোটার (জনপ্রতিনিধি) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএমএ ভোট দেবেন।
শেরপুর: এদিকে শেরপুরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল প্রতীকের (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থী হুমায়ুন কবীর রুমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী চন্দন কুমার পাল (আনারস প্রতীক)। এ সময় ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কালো টাকা ও সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়ানোর অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল শনিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় হুমায়ুন কবীর রুমান দলীয় পদ হারানোর পর থেকে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করছেন। ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কালো টাকার প্রলোভনে প্রলুব্ধ করছেন ভোটারদের। কেবল তাই নয়, নির্বাচনী প্রচার ও সভা-সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন তিনি। এ ছাড়া ভোটারদের ডেকে নিয়ে তিনি ভোট প্রদানের জন্য কালো টাকা বিতরণ করছেন।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাহেলা আক্তার বলেন, আনারস প্রতীকের প্রার্থী চন্দন কুমার পালের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো প্রার্থীকে অবকাশকেন্দ্র ব্যবহারের অনুমতি না দিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন ও সাধারণ সদস্য পদে পাঁচটি ওয়ার্ডে মোট ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে দুটি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে অ্যাডভোকেট ফারহানা পারভীন মুন্নী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় শুধু ২ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ৭৪৩ জন।