হোম > ছাপা সংস্করণ

গাছের মায়ায় দুই দশক

কে এম মিঠু, গোপালপুর

গোপালপুর উপজেলার গোপালপুর-নলিন ১৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাড়ে যৌথভাবে গাছ লাগায় উপজেলা এলজিইডি ও এসডিআইপিকে। ২০০০ সালে ফরেস্ট্রি সেক্টর প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করা হয়। আর এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ১৮ জন অসহায় নারীকে। দায়িত্বে থাকা নারীরা এক এক করে সরে যান। কিন্তু গাছের মায়া ছাড়তে পারেননি বুলবুলি বেগম। দুই দশক ধরে পাহারা দিচ্ছেন সড়কের গাছ।

কথা ছিল তিন বছর প্রত্যেকে মাসে তিন মণ গম ও নগদ ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। গাছ বড় হলে কাটার পর পাঁচ শতাংশ হিস্যাও পাবেন তাঁরা। কিন্তু ২০০২ সালে প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এসডিআইপিকে সরে যাওয়ার পর গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে থাকেন ওই নারীরা।

বুলবুলি বেগমের বাড়ি উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের সোনাআটা গ্রামে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যৌতুকের টাকা পরিশোধ না করায় বিয়ের চার বছরের মাথায় ঘর ভাঙে বুলবুলির। দুই সন্তান নিয়ে ওঠেন বাবার ভিটায়।

সড়কের সোনাআটা পশ্চিম অংশের দায়িত্ব পাওয়া জুলেখা জানান, তিনিও ১২ বছর গাছ পাহারা দিয়েছেন। গাছ বেড়ে উঠলে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাটা শুরু করে দুর্বৃত্তরা। জনপ্রতিনিধি ও এলজিইডিকে তাঁরা জানিয়েও প্রতিকার পাননি। শেষমেশ গাছের হিস্যা পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন তাঁরা। কিন্তু বুলবুলি এখনো গাছ পাহারা দিচ্ছেন। এসব গাছের মধ্যে আকাশমণি, শিশু, ইউক্যালিপটাস ও অর্জুনের মতো মূল্যবান কাঠগাছ রয়েছে।

সোনাআটার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, দুর্বৃত্তদের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বুলবুলি রাতের বেলা দা নিয়ে পাহারা দেন। গাছের প্রতি মায়া দেখে গ্রামের অনেকেই তাঁকে সহযোগিতা করেন। ফলে নবগ্রাম মোড় থেকে পূর্ব সোনাআটা সড়কে কিছু গাছ টিকে রয়েছে।

বুলবুলি বলেন, বিয়ের সময় দিনমজুর বাবা সড়ক বনায়নের সুফল দেখিয়ে তাঁকে বিয়ে দেন। কথা ছিল, গাছ পাহারার গম ও ভাতার পুরোটাই যৌতুক হিসেবে পাবেন স্বামী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এনজিও বকেয়া না দিয়ে লাপাত্তা হলে তাঁর সংসারও ভাঙে। বুলবুলি বর্তমানে গৃহকর্মীর কাজ করেন।

সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গাছের বেশির ভাগই অর্জুন। সড়কের উত্তরে বিশাল মাঠ। খরতাপ বা রোদবৃষ্টিতে কৃষকেরা এই অর্জুনের ছায়ায় বিশ্রাম নেন। সড়কের দক্ষিণের বড় বিলে হাজারো পাখির আনাগোনা। আশপাশে বড় গাছপালা না থাকায় পাখি অর্জুনগাছে বাসা বাঁধে। এ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করেন অনেকে।

বুলবুলি বলেন, বকেয়া পাওনা মেলেনি বলে আফসোস নেই তাঁর। গাছের ছায়া ও মায়ায় তিনি জড়িয়ে গেছেন। গাছ তাঁর কাছে সন্তানের মতো।

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আঞ্জুয়ারা ময়না বলেন, সরকার টাকা খরচ করে সড়ক বনায়ন করে। উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ রক্ষা ও বিত্তহীন নারীদের অংশীদার করে দারিদ্র্যবিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়ন করা। সন্তানের মতো আগলে রেখে এসব নারীরা চারাগাছকে বৃক্ষে পরিণত করেছে। অথচ এর সুফল ছিনিয়ে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আজাহার আলী বলেন, ‘এলজিইডি গাছ রক্ষা এবং এমনকি বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। সবখানে গরিবেরাই ঠকে।’

স্থানীয় ফরেস্ট রেঞ্জার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সড়ক বনায়নের হিস্যা বণ্টন এবং সার্বিক মনিটরিংয়ের দায়িত্ব এলজিইডির।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসব তো অনেক আগের কথা। তাই তেমন কিছু জানেন না তিনি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ মল্লিক বলেন, বিষয়টি অনেক পুরোনো। তবে এখন কোথাও সড়কের গাছ চুরি গেলে উপজেলা প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ