হুট করেই বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ, মরিচের দাম। খেতে পেঁয়াজ, মরিচ না থাকায় দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তবে সারা দেশের মতো টাঙ্গাইলের মধুপরে চাল, চিনি ও তেলের দামেও যেন আগুন লেগেছে। দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। এ দিকে বিদেশ থেকে আমদানি করা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আর বাড়বে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যের সংকট দূরতে সরকারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর। তিনি বলেন, ‘বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দাম নিয়ন্ত্রণে করতে সরকারকে তদারকি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে কখন কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টি হয় তার নজরদারিতে রাখতে হবে। ওই সময়ে জোগান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মধুপুরের কাঁচামালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব পণ্যই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা, রসুন ৬৫ টাকা, শিম ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামালের পাশাপাশি বেড়েছে সয়াবিন তেলসহ চিনি, মুরগি, ডাল ও আটার দাম। সয়াবিন তেল দাম ১৫০ টাকায়, সরিষা তেল দাম ২২০ টাকায়, চিনি ৮০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬০ টাকায়, কক মুরগি ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২৮০ টাকায়, মসুর ডাল মোটা ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা দরে।
কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘খেতে সবজি কম। তাই দাম বেড়েছে। কিন্তু তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, চাল, আটার দাম লাগামহীন ভাবে বেড়েই চলছে। সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বাড়বে।’
পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে যখন বৃষ্টি প্রয়োজন ছিল, তখন বৃষ্টি হয়নি। ফলে সবজির ফলন কম হয়েছে। আবার যখন বৃষ্টি দরকার ছিল না, তখন বৃষ্টি হওয়ায় সবজি খেতে ক্ষতি হয়েছে। ফলে এবার মধুপুরে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।’
কুড়াগাছার কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কৃষকের খেতে সবজি শেষ হয়ে গেছে। অন্য জেলা থেকে সবজি আসার কারণে দাম অনেক বেশি। মিষ্টি কুমড়া ৭০ টাকা কেজি, ফুল কপি ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। নতুন সবজি না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’
দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের জনগণ। রিকশা চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, `সারা দিনে আয় হয়েছে ৫৪০ টাকা। রিকশা ভাড়া দিতে হবে ৩ শ। বাকি টাকা দিয়ে চাল কিনব না, সবজি কিনব বুঝতে পারছি না।’’
কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, `আমাদের আয় নাই বললেই চলে। ফসল যা ফলে আগের ঋণ শোধা করতেই চলে যায়। বর্তমানের কথা ভাবতে ভাবতে আবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আবার দাদন ছাড়া তো ঋণ জোটে না। এ দিকে বাজারে বেড়েই যাচ্ছে পেঁয়াজ-মরিচ দাম। তাহলে আমাদের কি হবে? সরকারে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো দরকার।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, `সামনে বিদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই বিপদে পড়বে।’