১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত ভাগ হলো। জন্ম হলো পাকিস্তানের। আবদুল আহাদ তখন কলকাতায়। ১৬ আগস্ট ছিল ঈদ। রেডিও থেকে আবদুল আহাদকে বলা হয়েছিল, সে দিন যেন তিনি দুটো প্রোগ্রাম করেন। একটি প্রচারিত হবে সকালে, অন্যটি রাতে। সকালের অনুষ্ঠানের জন্য সিকান্দার আবু জাফরের লেখা দুটো গান তিনি রেকর্ড করিয়েছিলেন সমবেত সংগীত হিসেবে। রাতে করেছিলেন গীতিবিচিত্রা, লিখেছিলেন ফৈয়াজ হাশমী। মুসলমান শিল্পীরাই সে অনুষ্ঠানে গান করেছিলেন। তালাত মাহমুদ, মহিতুল হক, ইফতেফার আলম, হুসনা বানু, জাহানারা আহসান ও নীরু শামসুন নাহার অংশ নিয়েছিলেন গানে।
দেশ ভাগ হয়ে গেলে আব্বাসউদ্দীন সমবেত কণ্ঠে পাকিস্তানের ওপর দুটি গান রেকর্ড করালেন গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে। তারাই কাজটি দিয়েছিল। কিন্তু সে গান রেকর্ড করতে গিয়ে আব্বাসউদ্দীনকে বিপদে পড়তে হলো। হিন্দু যন্ত্রীরা বেঁকে বসলেন। বললেন, পাকিস্তানি গানের সঙ্গে তাঁরা বাজাবেন না। তখন গ্রামোফোন কোম্পানি গ্র্যান্ড হোটেলের ফির পো রেস্তোরাঁয় বাজাতেন যে ক্যাসানোভা, তার দলকে দিয়েই বাজানোর কাজটি করালেন।
তখন মুসলমানরা কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার কথা ভাবছেন। আবদুল আহাদ কোনো এক কাজে ঢাকায় গেলে তাঁকে ঢাকা বেতারে প্রযোজক হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য বলা হলো। কলকাতায় ফিরলেন। দোটানায় পড়ে গেলেন আবদুল আহাদ। হেমন্তের রেকর্ডিং ছিল একদিন। এটাই আবদুল আহাদের করা শেষ রেকর্ডিং। যে গানগুলো করেছিলেন হেমন্ত, সেগুলো হলো ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা...’, ‘আমার গোধূলি লগন...’, ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে...,’ ‘তোমায় গান শোনাব...’।
হেমন্তকে বললেন আহাদ, ‘আমাকে ঢাকা বেতারে যোগ দিতে বলছে।’
হেমন্ত বললেন, ‘তুই চলেই যা। কারণ এখানকার যা পরিস্থিতি, তাতে করে তোকে খুব অসুবিধায় পড়তে হবে। সবাই তো আর হেমন্ত নয়।’
আবদুল আহাদ ঠিক করে ফেললেন, ঢাকায় যাবেন।
সূত্র: আবদুল আহাদ, আসা যাওয়ার পথের ধারে, পৃষ্ঠা ১১৯-১২২