এ কথা অনেকেই জানেন না, ১৯২৬ সালে কলকাতায় যখন নিখিল ভারত কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল, তখন কংগ্রেসের অভ্যর্থনা কমিটির একমাত্র মুসলিম নারী সদস্য ছিলেন সুফিয়া কামাল। ৩২ ঘোড়ার গাড়িতে করে যখন সভাপতি মতিলাল নেহরু এসে নামলেন সভা প্রাঙ্গণে, তখন কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল সুফিয়াকে।
এ সময় থেকেই সুফিয়া সভা-সমিতিতে, সাহিত্য আসরে যাওয়া শুরু করেন। স্বামীসহ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান। রবীন্দ্রনাথ বিপুল উৎসাহ দেন তাঁকে। শান্তিনিকেতনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু বাঙালি নারী তখনো পর্দার আওতা থেকে বের হতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘চলো, আমার সঙ্গে ইউরোপ ঘুরে আসবে। দেখবে কী অপরূপ ঐশ্বর্যে তোমার মন ভরে উঠবে।’ কিন্তু ওই পর্দার কারণে যাওয়া হয়নি।
কিন্তু প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে বিমানে চড়েছেন সুফিয়া। নারী আরোহী হয়ে কলকাতার ওপর দিয়ে বিমানে চক্কর দিয়ে এসেছিলেন তিনি। ঘটনাটা কিন্তু পারিবারিকভাবে সহজে মেনে নেওয়া হয়নি। বড় মামা ফাঁকি দিয়ে মিথ্যে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে তাঁকে বরিশালে নিয়ে গেলেন। এরপর শুরু হলো জেরা। বলা হলো, বিমানে চড়ে তিনি পারিবারিক ইজ্জত নষ্ট করেছেন। এই কঠিন অবস্থা থেকে সুফিয়াকে রক্ষা করলেন মুসলিম নারীসমাজের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি সুফিয়াকে আঞ্জুমান-ই খাওয়াতিন-ই-বাংলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত করে নিলেন। মামা আর চাচাশ্বশুর অনেক চেষ্টা করেছিলেন তাঁকে শায়েস্তাবাদের বাড়িতে আটক রাখতে। কিন্তু তাঁরা যখন বরিশালের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সুফিয়ার সাহিত্যকর্মের প্রশংসা শুনলেন এবং বিমানভ্রমণ নিয়ে ইতিবাচক কথাবার্তা শুনলেন, তখন তাঁরা নরম হয়েছেন।
সুফিয়ার অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। আরও একটি তথ্য আছে সুফিয়া কামাল সম্পর্কে। সুফিয়াই প্রথম মুসলিম নারী, যিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেছিলেন।
সূত্র: সারাহ কে বোল্টন ও সিরাজুদ্দীন হোসেন, মহীয়সী নারী, পৃষ্ঠা ৭২-৭৯