বিশ্বকাপ ফুটবলের ঢক্কা নিনাদ বেজে গেছে। বিশ্বকাপ এমনি বাঙালিজীবনের অন্য রকম উৎসব। এবার বিশ্বকাপ হচ্ছে তুলনামূলক নিকট-দূরত্বে। কাতার বিশ্বকাপ দেখতে গ্যালারিতে প্রচুর বাংলাদেশি থাকলেও এবারের বিশ্বকাপ ঘিরে রাজধানীতে আমেজ যেন একটু কমই লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিশ্বকাপে ঢাকার আমেজ বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় বাসাবাড়িতে পতাকার বাহার। বিশ্বকাপ এলেই রংবেরঙের পতাকায় ঢাকা পড়ে যায় ঢাকা। অনেকে তো বিশ্বকাপের সময় ঢাকা শহরকে ‘জাতিসংঘ’ বলেও রসিকতা করেন। এবার গলি-মহল্লা, বাড়ির ছাদে একটু কমই দেখা যাচ্ছে প্রিয় দলের পতাকা ওড়ানোর প্রতিযোগিতা।
গতকাল রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি বাড়ির ছাদে গড়ে ৫-৭টি পতাকা উড়তেও দেখা যায়নি। মিরপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, উত্তরা, গুলশান, গুলিস্তান ও ওয়ারীর দিকেও পতাকার সংখ্যা বলার মতো নয়। বিষয়টি একটু যেন অবাক করার মতোই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় বিভিন্ন সমর্থকগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিরায়ত জুন-জুলাই থেকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সময় পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং নতুন প্রজন্মের সামাজিক মাধ্যমে অতি সক্রিয় থাকার কারণেই এবার পতাকা কেনায় আগ্রহ কিছুটা কম।
এই বিষয়ে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফ্যানস গ্রুপ অব বাংলাদেশের অ্যাডমিন ফরিদ আহমেদ জয় আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের আমেজ কমই মনে হচ্ছে। বিশ্বকাপ হতো জুন-জুলাইয়ে। কাতারে ওই সময় বেশি গরম পড়ে, আবহাওয়ার কারণে সেটা নভেম্বর-ডিসেম্বরে হচ্ছে। বছরের শেষ দিকে মানুষের ব্যস্ততা এবং শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। আর ইউরোপীয় লিগ মৌসুমের মাঝপথে হওয়ায় খুব বেশি আলোচনায় থাকার সময় পায়নি কাতার বিশ্বকাপ।’
ফরিদ সামনে এনেছেন চলমান অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়টিও, ‘অর্থনৈতিক সংকটে আছে মানুষ। দ্বিগুণ দাম বেড়েছে পতাকারও।আর্থিক সংকট এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা প্রভাবিত করছে মানুষকে। এতে মানুষ পতাকা টানানো কিংবা এই বিশ্বকাপ আমেজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারছে না।’
তবে আরেক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট সৌরভ ব্যানার্জি আশাবাদী, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা শুরু হলেই উন্মাদনা শুরু হবে, ‘আগের চেয়ে আমেজ কম দেখা গেলেও আশা করি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা শুরু হলে এটা বাড়বে এবং পতাকাও বাড়বে ছাদে ছাদে।’
রাজধানীতে কম দেখা গেলেও ঢাকার বাইরে বিশ্বকাপ আমেজ আগের মতোই দেখা যাচ্ছে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লম্বা পতাকা বানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। গত পরশু ফেনীতে সালের (২০২২) সঙ্গে মিল রেখে ২০২২ ফুটের আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করেছেন মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী।
ফেনীর সামাজিক সংগঠক শাহিন পাটোয়ারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এদিকে বিশ্বকাপের আমেজ ভালোই। পতাকা উড়ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার, অন্যান্য দলেরও কিছু দেখা যাচ্ছে। তবে শহরে আগের চেয়ে বিশ্বকাপের আমেজ কিছুটা কমই মনে হচ্ছে।’
৩৫ বছরের বেশি সময় দরজির কাজ করেন বিক্রমপুরের আলম ভূঁইয়া। অনেক বছর ধরে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় কাজ করছেন তিনি। আলম জানালেন, বছরের সব সময়ই যেকোনো দেশের পতাকা পাওয়া যায় তাঁর কাছে। বিশ্বকাপ এলে অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে পতাকা বিক্রি ও সেলাই করেই তুমুল ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে।
তবে আলমের কাছে এবারের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন, ‘সারা বছরই আমি পতাকা বিক্রি করি। বিশ্বকাপের যেকোনো দলের পতাকাই আমার কাছে আছে। ৩৫ বছর ধরে এই পেশায় জড়িয়ে আছি। কিন্তু অন্য বিশ্বকাপের তুলনায় এবার পতাকা একটু কমই বিক্রি হচ্ছে।’