হোম > ছাপা সংস্করণ

মেয়েকে অ্যাসিড ছুড়েছে ভাতিজা, সমঝোতায় বাবা

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী

মধ্যরাতে হঠাৎ সুমাইয়ার চিৎকার। কান্নাকাটি শুরু করেছে ছোট ভাই আলীও। অ্যাসিডে ঝলসে গেছে দুজনের শরীরের একাংশ। পাশের কক্ষ থেকে ততক্ষণে হাজির মা তাসলিমা। সাত-পাঁচ বুঝে ওঠার আগেই চাচাতো ভাই এনায়েত গাজী, রাসেল গাজী ও রাসেলের স্ত্রী মারিয়া তড়িঘড়ি করে পুলিশে খবর দেন। ঘটনার ১৫ মিনিট না পেরোতেই পুলিশ এল বাড়িতে। অ্যাসিডদগ্ধ সুমাইয়ার সামনেই প্রতিবেশী বশার মীরার ঘাড়ে দোষ চাপালেন সুমাইয়ার চাচাতো ভাইয়েরা। অ্যাসিড নিক্ষেপের দায়ে বশারকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে মরিয়া তাঁরা।

কিন্তু ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর সব পরিকল্পনা’ ভেস্তে যায় সুমাইয়ার দেওয়া তথ্যে। অসুস্থ সুমাইয়া পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে, আপন দুই চাচাতো ভাই তাঁকে ও তাঁর ভাই আলীকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছেন। ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্যে পুলিশ এরই মধ্যে সুমাইয়ার দুই চাচাতো ভাইকে আটক করেছে।

পটুয়াখালীর সদর উপজেলায় সুমাইয়া ও তাঁর ভাইয়ের শরীরে অ্যাডিস নিক্ষেপের ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট। সে রাতে বাড়িতে ছিলেন না তাঁদের বাবা রাজা মিয়া গাজী। এমনকি মেয়ের শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপকারীর বিচারও চান না তিনি।

সুমাইয়াকে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট তাঁর খালা রেবেকা বেগম বাদী হয়ে সুমাইয়ার চাচাতো ভাই এনায়েত গাজী ও রাসেল গাজীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

এদিকে এসব নিয়ে ফের মুখ খুলেছেন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া (১৮)। সম্প্রতি পুলিশের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় সুমাইয়া অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তাঁর বাবা রাজা মিয়া ও চাচাতো ভাইয়েরা মিলে অ্যাসিড নাটক সাজিয়েছিলেন। এসব জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের হোয়াটসঅ্যাপে সুমাইয়া ভিডিও বার্তা পাঠালে বিষয়টি জানাজানি হয়।

আজকের পত্রিকাকে সুমাইয়া বলেন, ‘অ্যাসিডে দগ্ধ হওয়ার পর থেকেই আমার বাবা আমার চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা করেছেন। মামলার আসামি আমার চাচাতো ভাইদের বাঁচাতে উনি চেষ্টা করছেন। এমনকি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসহ আমাকে ভারতে ফেলে দেশে ফিরেছেন। এদিকে চিকিৎসার টাকা জোগাতে আমার মা এখন বাংলাদেশে। আমাকে দয়া করে বাঁচান। আমি আর যন্ত্রণা সইতে পারছি না।’

সুমাইয়ার মা তাসলিমা বেগমও অভিযোগ করেন, ‘মেয়েকে ফেলে উনি (রাজা মিয়া) দেশে ফিরেছেন। মেয়ের জন্য টাকা ম্যানেজ করতে আমিও এখন দেশে।’

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া গাজী বলেন, ‘ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমি দেশে আইছি। মেয়ের চিকিৎসার টাকা জোগাতেও আমি আইছি। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকাও দিসি; বাড়িতে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে।’

এ প্রসঙ্গে সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া বলেন, ‘আমার ভাতিজাই অ্যাসিড মারছে। মীমাংসার জন্য ৭ লাখ টাকাও দেছে। এহন টাকা মেয়ের অ্যাকাউন্টে। তারা টাকা ফালাইয়া দেবে নাকি এটা দিয়েই চিকিৎসা করাবে, মা আর মেয়েই জানে। তারা টাকাও চাবে আবার বিচারও চাবে, দুইডা একসঙ্গে কেমনে? তারাই ভাইবা দেহুক কী করবে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুমাইয়ার বাড়ি পটুয়াখালীর সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গেরাখালীতে। আর বাড়ির পাশেই বশার মীরার পরিবারের সঙ্গে তাঁর চাচাদের জমিসংক্রান্ত ঝামেলা হয়। এ ঘটনায় সংঘর্ষে একজন নিহতও হয়। আর নিহত হওয়ার ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া গাজী ও তাঁর ভাই-ভাতিজাদের আসামি করে মামলা করে বশার মীরা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার তদন্ত শেষে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেয়েটি ফোনে এবং ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নানা তথ্য দিয়েছে। বিষয়টি বিচারাধীন।’

সুমাইয়া ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি ভারতের ভেলোরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুমাইয়ার ভাই আলী সেরে উঠেছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ