চিকিৎসা ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণের এ সময়ে অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম রংপুরের ডা. হৃদয় রঞ্জন রায়। মানবিক কাজের অংশ হিসেবে এই চিকিৎসক প্রতি মাসে একদিন বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেন। এমনকি অস্ত্রোপচার করতেও নেন না কোনো অর্থ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হৃদয় রঞ্জন সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তিন বছর ধরে প্রতি মাসের প্রথম শনিবার ফি ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। যত দিন শারীরিকভাবে সক্ষম থাকবেন তত দিন এমন সেবা চালিয়ে যেতে চান মানবিক এই চিকিৎসক।
হৃদয় রঞ্জনের সঙ্গে কথা হয় গত শুক্রবার। তিনি জানান, ছাত্রজীবন থেকেই সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। কর্মজীবনে প্রবেশের পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল। এর সুবাদে বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
হৃদয় রঞ্জন বলেন, ‘প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আয়োজনে রংপুরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করি। ২০১৮ সালে রংপুরে এ রকম একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করি। ওই দিনই সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ (এসওএসবি) থেকে সেই বিকেলে বিনা মূল্যে রোগী দেখার নির্দেশনা সংক্রান্ত একটি মেসেজ আসে। নির্দেশনা অনুযায়ী রোগী দেখার পর কার্যক্রমের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করি। এতে অনেকেই এমন কাজের প্রশংসা করেন এবং প্রতি মাসে একদিন এ স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।’
ডা. হৃদয় জানান, সবার অনুরোধের বিষয়টি মাথায় ঘুরতে থাকে। পরে বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবার সমর্থন করায় বিনা মূল্যে রোগী দেখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে রোগী দেখা শুরু করেন।
রোগী দেখার দিন হিসেবে প্রতি মাসের প্রথম শনিবারকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে এই চিকিৎসক জানান, এ দিনটি তাঁর জন্মবার।
ডা. হৃদয়ের আশা, তাঁর এমন কাজকে দেশের চিকিৎসক সমাজ একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে নেবেন। তিনি মনে করেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা যদি জেলায় জেলায় ঘোষণা দিয়ে এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা চালু করেন তাহলে জাতি উপকৃত হবে।
বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পেছনে হৃদয় রঞ্জনের আরেকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হলো চিকিৎসকদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তা পাল্টানোর চেষ্টা করা।
হৃদয় রঞ্জন ১৯৯৩ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ২০তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে যোগদান করেন। ২০০৫ সালে জেনারেল সার্জারিতে এফসিপিএস সম্পন্ন করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া শেষে বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি আমেরিকান কলেজ অব সার্জনের একজন ফেলো।