নগরবাসীর সময় কাটানোর পছন্দের এক জায়গা বিপ্লব উদ্যান। করোনা কমে যাওয়া ও সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়ায় স্থানটি এখন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত অবধি চলে অফুরান আড্ডা, খুনসুটি, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি।
চারদিকে সবুজ। মাঠজুড়ে ঘাস আর ফুল গাছের সমারোহে আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। তাই এক কাপ চায়ের সঙ্গে আড্ডাটাও জমে এখানে। ইতিহাসের পাঠও নেওয়া যাচ্ছে এই উদ্যানে। কারণ ভাষা আন্দোলন থেকে বিজয় দিবসের ইতিহাসও আলাদা করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা জোনও।
ইতারিয়া রেস্টুরেন্টের আলাদা কর্নার হামিদ ভাইয়ের চা। বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গড়ে ৫০০ কাপ চা বিক্রি হয় শুধু এই রেস্টেুরেন্টেই। এ রকম ২০টির মতো রেস্তোরাঁ আছে।
মালাই চা হাতে নিয়ে চার বন্ধু মিলে অনেক দিনের জমে থাকা গল্প করছিলেন। তাঁদের একজন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব হাসান। তিনি তাঁর আরেক বন্ধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমাম হোসেনকে কল করছিলেন। ‘বন্ধু জনি, সাকিব ও রহিম এসেছে। কই তুই, চলে আয় আড্ডার উদ্যানে।’
রাকিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেড় বছর সেভাবে দেখা হয়নি, আড্ডা হয়নি। এখন করোনা কমে যাওয়া ও টিকা নেওয়ার পর সাহস বেড়েছে। অনেক দিন পর একত্রিত হলাম।
তারপর হেসে বলেন, বন্ধু জনি আর সাকিবরা নাম দিয়েছে আড্ডার উদ্যান। বিপ্লব উদ্যান সবাই চেনে। এখন বেশি আড্ডা ও গল্প হয়তো তাই রসিকতা করে আড্ডার উদ্যান হিসেবে বলেন।
দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী মাকসুদ রহমান। তিনি বলেন, বসার মতো খোলা জায়গা কই? বিপ্লব উদ্যানের সবুজ ও একে সুন্দর করে আধুনিকায়ন করায় সময় পেলে এসে বসি, কিছুটা সময় কাটাই।
ইতারিয়া রেস্টুরেন্টের মালিক জিয়া চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখানে দিনে ৫০০ কাপ চা বিক্রি হয়। বসার সুন্দর জায়গা ও চমৎকার পরিবেশের কারণে মানুষ এখানে ভিড় করছেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় কিছু তরুণ এসে চাঁদা দাবি করে। নাশতা খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যায়। এসব নিয়ন্ত্রণ করা গেলে উদ্যানটি আরও ভালো হতো।
জানা যায়, ১৯৭৯ সালে দুই একর জায়গার ওপর বিপ্লব উদ্যানটি চালু হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে সিটি করপোরেশন আধুনিকায়ন করার প্রকল্প হাতে নেন। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর রিফর্ম লিমিটেড ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্ট লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে চসিকের এ উদ্যান ২০ বছরের জন্য ইজারা দেয়। প্রতিষ্ঠান দুটি নিজেদের অর্থায়নে একে আধুনিকায়ন করছে।
স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে সেগুলো এই উদ্যানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। উন্মুক্ত জায়গায় ঘাস লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুদের জন্য আলাদা জোনও থাকবে।