বরকামতা গ্রামের শংকর ঘোষ। ১০ বছর ধরে বরকামতায় মাঠা বিক্রি করে আসছেন তিনি। প্রথমে শখের বশে এ ব্যবসা শুরু করেছিলেন শংকর। পরে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শখকে পুরোদস্তুর ব্যবসায় রূপান্তর করেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি একই গ্রামের মন্টু ঘোষ, পান্তুষ দত্ত, কার্তিক ঘোষ, বিল্লাল হোসেনও মাঠার ব্যবসা শুরু করেন। বরকামতাকে এখন ‘মাঠার গ্রাম’ বলে চেনে সবাই।
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার একটি গ্রামের নাম বরকামতা। অন্য এলাকার মাঠা থেকে এখানকার মাঠার স্বাদ কিছুটা আলাদা। এ জন্য বিভিন্ন উপজেলা থেকে এখানে মাঠা খেতে আসে লোকজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল হয়ে বরকামতা গ্রামে সহজে যাওয়া-আসা করা যায়।
গ্রামের লোকজন জানান, মাঠার গ্রাম হিসেবে এটি বেশ পরিচিত। গরমে মাঠা বিক্রির ধুম পড়ে বেশি। তখন প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়। বাজারের পাঁচটি দোকানে লোকজন থাকে ভরপুর। এ ছাড়া দুই ঈদে, পূজা, পয়লা বৈশাখ ও রমজানে ইফতারের আগে লোকজনের আনাগোনা থাকে বেশি। তখন দোকানে মাঠার কারিগর বেশি থাকে। এরপরও মাঠা বিক্রি করে কুলিয়ে ওঠা যায় না।
বরকামতা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভালো মানের দুধের কারণেই এখানে ভালো মানের মাঠা তৈরি হয়। তবে মাঠা তৈরিতে কারিগরেরাও যথেষ্ট যত্নশীল। মাঠা তৈরিতে এ গ্রামে বেশ কয়েকজনের সুনাম রয়েছে। এর মধ্যে শংকর ঘোষ অন্যতম। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মাঠা তৈরি ও বিক্রি করছেন।
বরকামতা বাজারে কথা হয় মাঠা বিক্রেতা শংকর ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার মাঠা সবাই পছন্দ করে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ মণ মাঠা বিক্রি হয়। অনেক দূর থেকে লোকজন এ গ্রামে মাঠা খেতে আসে। খেয়ে আবার বোতলে করে বাড়িতেও নিয়ে যায়।’ মাঠা বানানোর কারিগর মহিউদ্দিন জানান, টক দই, পানি, চিনি, লবণ ব্লেন্ডারে মিশিয়ে মাঠা দেওয়া হয়। প্রতি গ্লাস মাঠার দাম রাখা হয় ৩০ টাকা। প্রথমে হাতে মেশানো হতো। এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সময় বাঁচাতে ব্লেন্ডারে মিক্সড করা হয়।
পার্শ্ববর্তী চান্দিনা উপজেলা থেকে মাঠা খেতে এসেছিলেন জয়দেব, সৌরভ, সঞ্জয়, মনির ও নাজিম উদ্দিন নামের পাঁচ বন্ধু। জানা যায়, তাঁরা প্রায় সময়ই মাঠা খেতে এ গ্রামে আসেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখানকার মাঠা অন্য জায়গার মাঠা থেকে একটু আলাদাভাবে বানানো হয়। স্বাদও অন্য রকম।
মাঠার দোকানি বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি সারা দিন চার থেকে পাঁচ মণ মাঠা বিক্রি করি। তবে পাশের শংকরের দোকানে বেশি বিক্রি হয়। প্রথমে শখের বসে এ ব্যবসা শুরু করি। পরে মানুষের কাছে চাহিদা বেড়ে গেলে পুরোপুরি মাঠার ব্যবসা শুরু করি।’