কয়েক বছর ধরে ঢাকা শহর বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে। ঢাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হলো এর আশপাশের এলাকায় ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া। এ জন্য ঢাকার আশপাশে গড়ে ওঠা সব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ঢাকার জেলা প্রশাসক এসব ইটভাটা বন্ধ না করে উল্টো নতুন করে চালুর অনুমতি দিয়েছেন। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় বুধবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার ধামরাই ও সাভার উপজেলার প্রায় ৪০০ ইটভাটার মধ্যে ২০৪টিকে ইট পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর এই অনুমতির ঘটনা ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।
ইটভাটার কারণে শুধু পরিবেশের দূষণ হয় না। চাষের জমির পরিমাণও হ্রাস পায়। আমাদের দেশে দিনে দিনে নগরায়ণের কারণে এমনিতেই জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দেশের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য চাষযোগ্য জমির দরকার আছে। পুরোনো পদ্ধতিতে ধানি জমির মাটির ওপরের অংশ তুলে ইট তৈরি করলে অনেক বছর ধরে শস্যের ভালো ফলন হয় না। ভাটা থেকে ইট তৈরি করার জন্য শুধু চাষের জমি ছাড়াও কয়লার বিকল্প হিসেবে কাঠ পোড়ানো হয়। এতে বনসম্পদেরও ক্ষতি হয়। আমাদের দেশে এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় চাষযোগ্য জমি ও বনায়নের পরিমাণ কম। আবার জমির মাটি তুলে ফেলায় অনেক এলাকায় বিশাল গর্ত সৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দেয়। সে কারণে পুরোনো পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে ব্লক পদ্ধতিতে ইট তৈরির কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
ব্লক পদ্ধতিতে ইট তৈরি করলে অনেক জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। এতে ইট তৈরির জন্য মাটির দরকার পড়ে না। শুধু বালু আর সিমেন্ট দিয়ে ইট তৈরি করা যায়। বালু ও সিমেন্ট মিশিয়ে ডাইসে ফেলে মেশিনে দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ইট তৈরি করা যায়। এতে খরচও কম পড়ে। দেশে এই পদ্ধতিতে ইট তৈরির অনেক কারখানা তৈরি হয়েছে, কিন্তু প্রচারের অভাবে সেটা ব্যাপক মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় সব দেশে এই পদ্ধতিতে ইট তৈরি করা হয়। আর এসব দেশসহ চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, জাপান, কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়ায় ইট তৈরি করতে কৃষিজমির মাটির ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে। চীন ৫০ বছর আগে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি নিষিদ্ধ করেছে। ভিয়েতনামে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্মিত ভবনে ৮০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে।
এখন সার্বিকভাবে কৃষি, পরিবেশবান্ধব ও ভূমিকম্পসহনীয় ব্লক পদ্ধতিতে ইট তৈরি করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। তাই সরকারিভাবে ব্লক পদ্ধতিতে ইট তৈরি করা বাধ্যতামূলক করা দরকার। এ জন্য ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ ও (সংশোধিত) ২০১৮’ আইনটির পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আর ঢাকার জেলা প্রশাসক অবৈধ ভাটাগুলো নতুন করে চালুর অনুমতি দিয়েছেন, তাই সবার আগে তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।