শীতের আগমনী বার্তা প্রকৃতিতে। সকালের শিশিরভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। সেই সঙ্গে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হতে দেখা যাচ্ছে গাছিদের। শীত এলেই গ্রামীণ জনপদে প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হয় এই খেজুরগাছকে কেন্দ্র করে।
কিন্তু অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুরগাছের কদর বাড়ে এই শীত মৌসুমেই। গাছিরা খেজুরগাছ থেকে রস আহরণের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেন। শুরু করেন প্রাথমিক পরিচর্যার। এই কাজকে স্থানীয়ভাবে ‘গাছ তোলা’ বলা হয়।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঢাকিরগাঁও গ্রামের গাছি মো. মমিন (৫৫)। খেজুরগাছ থেকে রস আহরণ ও বিক্রি তাঁর মৌসুমি পেশা। কয়েক দিন পর থেকেই গাছে গাছে রস আসা শুরু হবে। তাই গাছ প্রস্তুতিতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। খেজুরগাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ প্রস্তুত করে চলেছেন তিনি। এখন যেন দম ফেলার সময় নেই।
মমিন মিয়া জানান, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি শীতকালে খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। এবার প্রায় ১০০ গাছ একাই তিনি প্রস্তুত করবেন রস আহরণের জন্য। আগে এই এলাকায় তিন-চারজন গাছি ছিল। গাছ ছিল হাজারেরও বেশি। এখন দিন দিন খেজুরগাছ কমে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে গাছের রস উৎপাদন ক্ষমতা।
অনুরূপভাবে উপজেলার দৌলতপুর, কালিকাপুর, উত্তর গোবিন্দপুর, সারপাড়, খাজুরিয়া, শিবপুর, আশ্বিনপুর, লামছড়ি, মোবারককান্দি, দিঘলদীসহ প্রায় পুরো উপজেলায় এখন গাছিরা ব্যস্ত খেজুরগাছ তৈরিতে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু হানিফ জানান, খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা থেকে গুড় তৈরি পর্যন্ত একটি শিল্প; যা আজ বিলুপ্তির পথে। উপজেলায় এখনো বেশকিছু খেজুরগাছ রয়েছে। ইতিমধ্যে গাছিরা গাছ প্রস্তুত করা শুরু করেছেন। খেজুরের গাছ ও গাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।