করোনার লোকসান কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই খুলনার মুরগি খামারগুলোতে দেখা দিয়েছে রানীক্ষেত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। আগস্ট থেকে অক্টোবর এই দুই মাসে খুলনা বিভাগে প্রায় ১০ লাখ মুরগি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
অপরদিকে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় বেশি দামে বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে খামারিদের। ফলে করোনার লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না মুরগি খামারিরা।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা বিভাগে মোট ১০ হাজার খামার রয়েছে।
খামারগুলোতে এক কোটি ৬৩ লাখ দেশি, ৬০ লাখ লেয়ার ও ১৩ লাখ ব্রয়লার মুরগি পালন হচ্ছে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৯টি মুরগি রানীক্ষেত নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
উল্লিখিত সময়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৯ হাজার ২৬৬টি মুরগি মারা যায়। জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মাগুরা জেলায়। মৃত্যুর দিক থেকে নড়াইল শীর্ষে।
এদিকে সরকারিভাবে রানীক্ষেত ভাইরাসের ভ্যাকসিন সরবরাহ কম। যে কারণে খামারিরা বাইরে থেকে বেশি দামে ভ্যাকসিন কিনছেন। তাতে খামারিদের উৎপাদন খরচ হচ্ছে বেশি।
এ ব্যাপারে খুলনার রূপসা উপজেলার জয়পুর গ্রামের মো. তারেক আল মামুন নামক এক খামারি বলেন, ‘গত এক মাসের ব্যবধানে এক এম্পুল ভ্যাকসিনের দাম বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ শ থেকে ছয় শ টাকা হয়েছে। ১৫ দিন আগে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও ৬০টি মুরগি মারা যায়। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।’
তিনি আরও জানান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ভ্যাকসিন বা পরামর্শ কোনোটাই পান না। ফলে ভাইরাস প্রতিরোধ করতে খোলা বাজার থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে।
অপরদিকে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় শাখার মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন বলেন, ‘দুই মাস ধরে রানীক্ষেত ভাইরাসে লাখো মুরগি আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই খামারিরা বাইরে থেকে বেশি দামে ভ্যাকসিন কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারিভাবে ভ্যাকসিন ৫০ টাকা। বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির ওই ভ্যাকসিন বাজার থেকে কিনতে গেলে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা দাম পড়ে। বেশি দামে কিনতে গেলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, করোনার পর ভ্যাকসিন সংকট। একের পর এক ধাক্কায় পোলট্রি শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এদিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অপরদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রনজিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘খুলনা জেলায় এখন পর্যন্ত রানীক্ষেত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কম। খামারিদের নিয়মিত ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে।’