চোরকে যতই বলা হোক না কেন ‘চুরি’ একটি অপরাধ এবং তা শাস্তিযোগ্য, চোর কি সে কথা মানবে? সে তার কাজটা করতেই থাকবে। চোর তো আর ধর্মের কথা শোনে না। সে তার চুরি বা অপরাধ ঢাকতে হয় মিথ্যা বলবে, নয়তো আরও একটা অপরাধ করে বসবে। এভাবে চোর যে তার অপরাধের পাহাড় বানিয়ে ফেলতে পারে, তা নিয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে
কিন্তু মনির মোল্যা সত্যিই চুরি করেছিলেন কি না, তা আমরা স্পষ্ট জানি না। তবে চুরির দায় এড়াতে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে খুন করেছেন—এ কথা তিনি অবলীলায় স্বীকার করেছেন।
ঘটনার শুরু অবশ্য দুটি মোবাইল ফোন চুরি দিয়ে। চার-পাঁচ মাস আগে ঝিনাইদহ শহরের উদয়পুর গ্রামে দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। সেই গ্রামে সাকিব নামে এক কিশোর থাকত তার নানার বাড়িতে। সে এলাকায় প্রচার করে, মনির মোল্যা ওরফে আশরাফুল মোল্যা সেই মোবাইল ফোন দুটি চুরি করেছেন। গ্রামের লোকেরা মারবে—সেই ভয়ে মনির এলাকা থেকে পালিয়ে কিছুদিন গা-ঢাকা দেন। তারপর চলতে থাকে তাঁর প্রতিশোধের পরিকল্পনা।
কিছুদিন আগে ছাগল চুরি করবেন বলে সাকিবকে ডেকে নিয়ে যান মনির। এরপর সাকিবের গলা কেটে হত্যা করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আড়ুয়াকান্দি গ্রামের এক পাটখেতে ফেলে রাখেন। স্থানীয়রা প্রথমে লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। সেখানে কেউ লাশ শনাক্ত করতে পারে না। এরপর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পাওয়ার খবর প্রচার হলে সাকিবের মামা শাকিল আহমেদ লাশ শনাক্ত করেন। সাকিবকে শেষ মনিরের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল বলে তথ্য দেন শাকিল।সেই তথ্যের ভিত্তিতে মনিরকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি খুনের দায় স্বীকার করেন।
এবার নিশ্চয়ই আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে মনিরের। কিন্তু যে প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরপাক খাবে, সেগুলোর উত্তর কে দেবে? এই যেমন মনির কেন প্রতিশোধপরায়ণ হলেন এবং খুন করলেন? মনিরকে কি কেউ বলে দেয়নি যে চুরি কিংবা খুন দণ্ডনীয় অপরাধ?
সমাজে বসবাসরত যেকোনো মানুষেরই প্রচলিত নিয়মকানুন বা আইন মেনে চলতে হয়। সেগুলো একজন মানুষ তাঁর জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে আয়ত্ত করতে থাকে, অর্থাৎ তিনি ভালো আর মন্দের পার্থক্য বুঝতে বুঝতেই বেড়ে ওঠেন। কিন্তু যাঁরা ওই নিয়মকানুনের ধার ধারেন না, তাঁদেরই সমাজ আখ্যা দেয় ‘অপরাধী’ হিসেবে। তাঁরা সমাজ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাহলে কেন তাঁরা অপরাধকেই আপন করে নেন? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো তত দিন পর্যন্ত মিলবে না, যত দিন এই সমাজে অপরাধ সংঘটিত হতে থাকবে।
প্রশ্নটা নিজেদের কাছে রাখতে হবে যত্ন করে, কেননা উত্তর নিজেদেরই খুঁজতে হবে—আমরা যারা ভালো ও মন্দের পার্থক্য বুঝি এবং আইন মেনে চলি, অন্যকে ভালো-মন্দের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তো আমাদেরই।