হোম > ছাপা সংস্করণ

সম্পদের হিসাব দিচ্ছে না পুলিশ সদস্যরাও

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

কোনো পুলিশ সদস্য নিজ জেলায় সম্পত্তি কিনতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তর বা ইউনিটের প্রধানের পূর্বানুমতি নিতে হয়। একইভাবে অনুমতি নিতে হয় অন্য জেলায় থাকা সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রেও। এই নির্দেশনা দেওয়া আছে পুলিশ প্রবিধানে। শুধু অনুমতি নয়, বছর শেষে একটি নির্দিষ্ট মাসে সমস্ত সম্পদের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও আছে তাঁদের। কিন্তু বছরের পর বছর পুলিশ প্রবিধানে উল্লেখিত এসব নিয়মনীতির ধার ধারছেন না পুলিশ সদস্যরা। কোনো প্রকার জবাবদিহি ছাড়াই বৈধ ও অবৈধ আয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি সম্পদ গড়ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি পুলিশের শীর্ষস্থানীয় সাবেক দুই কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কাজ করা ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদ নিয়ে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কোনো প্রকার জবাবদিহি ছাড়া কীভাবে এত সম্পদ গড়ে তুললেন তাঁরা। 

পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন এমন একজন হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। চলতি মাসে ঢাকার একটি আদালত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ জব্দের আদেশ দিলে বেরিয়ে আসে তাঁর বিপুল সম্পত্তির তথ্য। দুদকের নথিতে দেখা যায়, বেনজীর ও তাঁর পরিবার ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ২০৪ দশমিক ৫ একর জমি কিনেছেন। এর মধ্যে ১১২ একর কিনেছেন তিনি পুলিশ ও র‍্যাবপ্রধান থাকাকালে। এ পর্যন্ত তদন্তকারীরা ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কক্সবাজারে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের মালিকানাধীন জমির সন্ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১১২ একর জমি তাঁর নিজ জেলা গোপালগঞ্জে।

আরেক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদ অনুসন্ধান করে জনমনের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। দুদকে গৃহীত ১৪ পৃষ্ঠার ওই আবেদনে তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও কয়েকজন আত্মীয়স্বজনের সম্পদের বিবরণ তুলে ধরেছেন তিনি। 

পুলিশের সিটি এসবির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। শিমুলের বিষয়ে তথ্য চেয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি। সেখানে দাবি করা হয়, এই কর্মকর্তা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। অবৈধ উপার্জিত অর্থ দিয়ে রফিকুল ইসলাম নিজের ও স্ত্রীর পাশাপাশি ভাইবোন, ভাইবোনের ছেলেমেয়ে, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী, শ্যালিকা, শ্যালিকার স্বামীসহ বিভিন্নজনের নামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন। 

কিন্তু কর্মকর্তাদের এত সম্পদের বিষয়ে কিছুই জানে না পুলিশ সদর দপ্তরের সংস্থাপন শাখা। সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, যদি অনুমোদন না নিয়ে কেউ সম্পত্তি কিনে থাকেন, তাহলে সেটা পুলিশ প্রবিধান অনুসারে অপরাধ। 

প্রসঙ্গত, পুলিশ প্রবিধানের ১১২ (ঙ) ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘পুলিশ অফিসারগণ নিজ জেলা ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে ইন্সপেক্টর জেনারেলের পূর্বানুমতি ব্যতীত স্বনামে, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়স্বজন, চাকরবাকর বা আশ্রিত ব্যক্তির নামে বা বেনামে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন না। নিজ জেলা ব্যতীত অন্য কোনো জেলায় মালিকানা থাকলেও ইন্সপেক্টর জেনারেলের পূর্বানুমতি ব্যতীত তাহা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।’ ওই ধারায় আরও বলা হয়, প্রতিবছরের মার্চ মাসে তাঁদের (পুলিশ সদস্যরা) সম্পত্তির হিসাব কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন। 

সম্পত্তি কেনার আগে অনুমতি নেওয়ার নিয়ম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারী হিসেবে পুলিশ সদস্যদের সম্পত্তি কেনার আগে পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়ার বিধান রয়েছে। পুলিশ অধিদপ্তরের সদস্য হিসেবে এই অনুমতি নেওয়া সবার জন্য বাধ্যতামূলক।

বাধ্যতামূলক হলেও অনুমতি নিয়ে সম্পদ গড়ার চর্চা পুলিশে নেই । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সম্পত্তি কেনা বা সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে পুলিশপ্রধানের অনুমতি নেওয়ার পুরো ব্যবস্থাটি ভেঙে পড়েছে। বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যই অনুমতি না নিয়ে গোপনে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি গড়ছেন। এসব নিয়ে কোনো নজরদারিও নেই।

টানা তিন বছর পুলিশ মহাপরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এ কে এম শহীদুল হক। পুরো চাকরিজীবনে পুলিশ সদস্যদের সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার রীতি দেখেননি তিনি। সাবেক এই আইজিপি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ প্রবিধান ব্রিটিশ আমলের। সে সময় কোনো পুলিশ সদস্য সম্পদের হিসাব দিত কি না জানি না। তবে আমাদের চাকরিজীবনে পুলিশ সদস্যদের এমন হিসাব জমা দেওয়া ও অনুমতি নেওয়ার রীতি দেখিনি। আসলে এসব তথ্য জমা দিয়েও কোনো লাভ নেই। হয়তো কেউ কেউ নয়ছয় করেই জমা দিলেন, এভাবে কখনো দুর্নীতি কমানো সম্ভব না। যত দিন না পুলিশকর্তারা নিজেদের মানসিকতা থেকে দুর্নীতিকে মুছে ফেলবে, তত দিন দুর্নীতি কমবে না।’

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার নিয়ম আছে। পুলিশের নিজেদের আইনের যেহেতু একই নিয়ম আছে, তাই কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা এটা মানতে বাধ্য। তবে এখানে শুধু পুলিশ সদস্যদের দোষ দিলে হবে না। এর পেছনের ব্যর্থতার দায় পুলিশের কর্তাদের। তাঁরা নিজেরা সম্পদের হিসাব দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন। অন্য সদস্যদের উৎসাহ দিতে পারতেন। তা করেননি, নিজেরা সম্পদ গোপন করে নিচের সদস্যদেরও উৎসাহ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ