রুনি ছিলেন এটিএন বাংলায়। ওই হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছর বয়সী শিশুপুত্র মাহির সরওয়ার মেঘ। সাগর-রুনি পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় তাঁদের অমন নৃশংস হত্যার খবর গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল, মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আবেগ-সহানুভূতি তৈরি হয়েছিল। আশা করা হচ্ছিল সাংবাদিক দম্পতির খুনি বা খুনিরা দ্রুত ধরা পড়বে। কেন তাঁদের হত্যা করা হলো, তার কারণ জানা যাবে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। না, ৪৮ ঘণ্টা কেন ৪৮ মাসেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না তদন্তকারীরা। ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে বলেছিলেন, ওই বছর ১০ অক্টোবরের মধ্যে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে।
না, তারপর আরও কত ১০ অক্টোবর চলে গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বদল হয়েছেন; কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার কোনো সুরাহা হলো না। এবার হত্যার ১০ বছর পূর্ণ হলো। এখন এই হত্যারহস্য উন্মোচন হবে এবং ঘাতকেরা ধরা পড়বে, সেটা যেন আর বিশ্বাস করা সম্ভব হচ্ছে না কারও পক্ষেই।
খবরের পেছনে ছোটা তারুণ্যদীপ্ত এই দুই সাংবাদিক অকালে এভাবে ‘খবর’ হয়ে শেষে ‘বেখবর’ হয়ে হারিয়ে যাবেন—এটা শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, ভাবনারও বাইরে।
সাংবাদিক দম্পতি নিহত হওয়ার পর রুনির ভাই নওশের আলী শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করার পর অন্তত তিন দফায় তদন্তের দায়িত্ব বদল হয়েছে। প্রথমে থানার একজন কর্মকর্তা, দ্বিতীয়বার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং সব শেষে র্যাব হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায়। গত ১০ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সময় চাইলে ঢাকা মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম ২৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেছেন। ৮৫ বার সময় পেছানোর পর ধার্য করা ওই দিনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে কেউ বিশ্বাস করছেন না।
তদন্তের একপর্যায়ে র্যাব জানিয়েছিল, তদন্তে ‘দৃশ্যমান অগ্রগতি’ হয়েছে। তারপর আবার কেন অগ্রগতি অদৃশ্য হলো, তা কে বলতে পারবে? এখন র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাগর-রুনি খুনের মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। আর কত দিন মাস বছর অপেক্ষা করলে জানা যাবে কেন, কারা খুন করল সাগর-রুনিকে? খুনিরা কি সত্যি ধরা পড়বে না, তাদের শাস্তি হবে না?
সাগর-রুনির সন্তান মেঘ বেড়ে উঠছে নিদারুণ কষ্ট নিয়ে! স্বজনেরা বিচার না পাওয়ার দুঃখ বহন করে চলেছেন। বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতেই কাঁদতে থাকবে?