চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুরে চট্টলবিদখ্যাত গবেষক আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। এখনো এটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার দোতলা ভবনটি। ভবনের সীমানাপ্রাচীর ঢেকে গেছে লতাপাতায়। গেটে ঝোলানো তালায় ধরেছে মরিচা। আঙিনার লতাপাতা মূল ভবনের দেয়াল বেয়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রামসহ তিনটি জেলায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন—এমন তিনজন গুণী ব্যক্তির স্মরণে স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াজিষপুরে গবেষক আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর গবেষক আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।
গবেষণায় মরণোত্তর একুশে পদক পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর এই স্মৃতিকেন্দ্র ও সংগ্রহশালা নির্মাণের জন্য ২৬ শতক জমি দেন তাঁর ছেলে ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী।
কাজী মো. হারুন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই ভবনটিতে আবদুল হক চৌধুরীর নামে জাদুঘর করবে বলে শুনেছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না আসলে এখানে কী করা হবে।’ লালা বাবুর্চি নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে থেকে ভবনটির কাজ করতে দেখেছি। কাজ শেষ হওয়ার পরও এখানে কোনো কার্যক্রম চালু হয়নি। কেন এই অবস্থায় ভবনটি পড়ে রয়েছে, তা আমরা জানি না।’
গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর ছেলে ও চট্টগ্রামের ইসলামিয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ মনছুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘এখনো অনেক কাজ বাকি। এখানে আসবাব, বইপত্রসহ আরও অনেক কিছুর অভাব। এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়নি। এটিকে শাখা জাদুঘর হিসেবে চালানোর কথা ছিল।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে পরিদর্শনে গিয়েছি। এখনো কিছু কাজ বাকি। সেটা মহাপরিচালককে জানিয়েছি। তিনি দেখবেন বলেছেন।’
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখনো উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হয়নি। আপনারা আমাদের জানান কী কী কাজ হয়নি।’
গবেষক আবদুল হক চৌধুরী ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৪ সালে ২৬ অক্টোবরে তিনি মারা যান। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২টি, বাংলা একাডেমিতে আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চট্টগ্রামের সমাজ-সংস্কৃতি এবং শহরের তিনি পথিকৃৎ ইতিহাসবিদ।