১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ঘোষণা করেছিলেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ পরের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো আর্টস বিল্ডিংয়ের আমতলায় তড়িঘড়ি করে একটা সভা করা হয়েছিল। সেই সভায় মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘শুনেছি, ফ্যাসিস্ট ইতালিতে স্লোগান দেওয়া হতো—মুসোলিনি কোনো দিন ভুল করে না। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে অনুরূপভাবে আমাদের ওপর একটা সবক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে জিন্নাহর কথাই অভ্রান্ত। তার নড়চড় হবে না।’
জিন্নাহকে ‘কায়েদে আযম’ হিসেবে উল্লেখ না করায় দু-একজন ছাত্র মারমুখো হয়েছিলেন, কিন্তু মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের গায়ে কেউ হাত তোলেননি।
সে সময় তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি ছিলেন। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হলে ছাত্রদের সবাই তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ফজলুল হক হলের পুকুরের পূর্ব পাড়ে যে কয়েকজন ছাত্র বৈঠক করেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সে সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষেই মত দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃহদাংশ মনে মনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষেই ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আমতলায় ছাত্রসভা হচ্ছিল। পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে পারে ভেবে শিক্ষার্থীরা রুমাল ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন পানিতে। সভা শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার জন্য এগিয়ে যান হাবিবুর রহমান। যাঁরা এগিয়ে এলেন, তাঁদের নাম লিখে নিচ্ছিলেন আরেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ সুলতান। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর সাইকেলটি মোহাম্মদ সুলতানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুই আমার পঙ্খীরাজটা দেখিস, আমি চললাম।’
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিতে দিতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তখন বেলা সোয়া ১টা। উত্তেজনায় সারা শরীর থেকে আগুনের ভাপ বের হচ্ছে। রাজপথে বের হতেই পুলিশ তাঁদের একটা ট্রাকে তুলে নিল। তারপর নিয়ে যাওয়া হলো তেজগাঁও পুলিশ স্টেশনে। ছোট্ট একটা হাজতঘরে রাখা হলো তাঁদের।
সূত্র: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, একুশের সংকলন, স্মৃতিচারণ, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা ৫৭-৫৯