করে বলি না কেন, কক্সবাজার পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক সৈকত, তাতে কিছুই আর আসে-যায় না। যেখানে বেড়াতে গেলে ধর্ষণের আশঙ্কা থাকে, সেখানে যাওয়ার আগে তো কয়েকবার ভাবতে হবে। যে পরিবারে অল্পবয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে কিংবা নবদম্পতি, এমনকি যেকোনো বয়সের নারী রয়েছেন যে পরিবারে, সেই পরিবারের পক্ষে অনিরাপদ হয়ে যাওয়া পর্যটন এলাকায় যাওয়া কঠিনই বটে। সম্প্রতি স্বামী ও আট মাসের শিশুকে জিম্মি করে কক্সবাজার শহরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এটা নিশ্চয়ই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না।
পর্যটনশিল্প যেন বিকশিত হয়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে অনেকভাবেই। প্রয়োজনীয় প্রচারণা চালানো হলে এবং নিরাপত্তার শতভাগ গ্যারান্টি থাকলে পর্যটন এলাকাগুলোয় কর্মসংস্থান যেমন বাড়তে পারে, তেমনি তা নিয়ে আসতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা।
কিন্তু আমাদের দেশে যে পর্যটকেরা আসেন, তাঁরা এ দেশটা সম্পর্কে কী ভাবেন, সে প্রশ্ন কি আমরা কখনো তাঁদের কাছে করে দেখেছি? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই পর্যটকেরা যে দুটো জিনিস দেখে অবাক হন, তার একটি যানজট, অন্যটি হচ্ছে বাসের গায়ে অন্য বাসের ঘষাঘষির দাগ। নিরাপদে পর্যটন এলাকায় পৌঁছানোর সুযোগ কি তাঁদের আছে?
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাহন, মহাস্থানগড়সহ উত্তরের শহরগুলোয় রয়েছে পুরাকীর্তির অনন্য সম্ভার, কক্সবাজার আর কুয়াকাটায় রয়েছে সমুদ্রের ডাক। সুন্দরবন তো একাই হয়ে উঠতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার পীঠস্থান। সুপরিসর লঞ্চে দিন সাতেকের যে ট্যুরগুলো রয়েছে, সেগুলো হয়ে উঠতে পারে সুন্দরবনের ট্রাম্পকার্ড।
বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে? পৃথিবীব্যাপী যে পর্যটকেরা ঘুরে বেড়ান, তাঁরা কী দেখে আনন্দ পান? তাঁদের বিনোদনের জন্য কি আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে? নেপাল, ভুটান আর ভারতে কেন পর্যটকেরা এত বেশি সংখ্যায় যাচ্ছেন, অথচ তাঁরা বাংলাদেশকে দর্শনীয় হিসেবে কেন ভাবছেন না? কারণটা তো খুঁজে দেখতে হবে।
প্রথমত, একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের শতভাগ সৎ ও বিনয়ী হতে হবে। তৃতীয়ত, দেশি পর্যটকেরাও যেন যেকোনো দর্শনীয় স্থানে বিনা ভয়ে যেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক, সেটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য, আইনের সঠিক প্রয়োগ এই মানুষগুলোকে অসৎ হতে বাধা দেবে। আইন যাদের হাতে, তাদেরও হতে হবে কর্মদক্ষ ও সৎ। আরও অনেক ব্যাপার আছে, সেদিকে নজর দিতে হবে।