নওগাঁর নিয়ামতপুরের শমসাবাজ গ্রামের বিষ্ণু মাহাতো অন্যের খামারবাড়ির পাহারাদার। তাঁর মেয়ে অদম্য মেধাবী অন্তরা রানী এবার এসএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। নিয়ামতপুর সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে সে এ ফল করেছে। সে অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করতে চায়।
অন্তরা জানায়, ‘তার বাবা অন্যের খামারবাড়ি পাহারা দেন। মালিকের বাড়িতেই আমরা বসবাস করি। রাস্তা খারাপ হওয়ায় উপজেলা সদরের স্কুলে যেতে অনেক সমস্যা হতো। প্রতিদিন এক ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে হেঁটেই স্কুলে যেতাম। অভাবের কারণে ভ্যানে ওঠার সুযোগ ছিল না। অনেক সময় পরীক্ষার ফি দিতে পারিনি। তখন স্কুলের শিক্ষকেরা সহযোগিতা করেছেন। ভবিষ্যতে অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই।’
অন্তরার মা পরী মাহাতো বলেন, ‘তাঁদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। পরিবার নিয়ে অন্যের খামারবাড়িতে বসবাস করছেন। নিজে পড়াশোনা না জানলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। ছেলে অনার্স প্রথম বর্ষে, ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে আর অন্তরা এবার মেট্রিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ও শিক্ষক হতে চায়। সহযোগিতা পেলে হয়তো অন্তরার স্বপ্ন পূরণ হবে। যদি পড়াশোনা করানো সম্ভব না হয়, তাহলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেব।’
অন্তরার বাবা বিষ্ণু মাহাতো বলেন, ‘মানুষের খামারবাড়ি পাহারা ও জমিজমা দেখাশোনা করে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা পাই। তাতে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার সাধ্য নাই। ছেলেটা মানুষের জমিতে কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগায়। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে মেয়েটাকে পড়াশোনা করানো সম্ভব হতো।’
নিয়ামতপুর সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটা খুব মেধাবী। যদি সহযোগিতা পায় তবে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
নিয়ামতপুরের ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পড়াশোনার জন্য সরকার সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অন্তরার পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করা হবে।’