ভরা বর্ষা আর পূর্ণিমার জোতে দেখা মিলছে রুপালি ইলিশের। পাঁচ দিন ধরে নগরের পোর্ট রোড মৎস্য মোকামে ইলিশ উঠছে হাজার মণ করে। এসব ইলিশের বেশির ভাগই সাগরের লোনাপানির।
মৌসুম শুরু হওয়ায় সাগর মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। নদীতেও পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ। নিষেধাজ্ঞা চলা সত্ত্বেও নানাভাবে সাগরের ইলিশ ট্রাক ও বোটে করে মোকামে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে কারণে নদীর মাছের দামও কমেছে মণপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এদিকে মৎস্যসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, নদ-নদীতে পানি বাড়ায় ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়তে পারে।
গত রবি ও গতকাল সোমবার বরিশাল নগরের পোর্ট রোড মৎস্য মোকাম ঘুরে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাগর মোহনার লোনাপানির ইলিশ ধরা পড়ছে প্রচুর। পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের মৎস্য আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে সাগর মোহনার মাছ বেশি ধরা পড়ছে। নদীর মাছও কিছু আছে। রোববার হাজার মণ ইলিশ উঠেছে মোকামে। তিন-চার দিন ধরে একই হারে ইলিশ মিলছে।
ব্যবসায়ী মিজান জানান, গতকাল এক কেজি ওজনের নদীর ইলিশ প্রতি মণ ৫০-৫২ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৬০ হাজার টাকা। এলসি (৬০০-৯০০ গ্রাম) মণপ্রতি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, গত সপ্তাহে ছিল ৪৮ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৫ হাজার টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার টাকা। আর সাগর মোহনার বোটের মাছ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ২৪ থেকে ২৮ হাজার টাকা দরে।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটা, কলাপাড়াসংলগ্ন সাগরের কাছাকাছি অবস্থান করে ইলিশ ধরা হচ্ছে। তবে মোহনার কথা বললেও জেলেরা মূলত সাগর থেকেই বোট বোঝাই করে ইলিশ আনছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য স্বীকার করে জানিয়েছেন, সাগরের কোনো ফাঁকগলে তাঁরা এই মাছ ধরছেন তা বলা যাচ্ছে না। তবে মোকামের বেশির ভাগ মাছই সাগরের।
এদিকে মৌসুম শুরু হলেও নদীতে তেমনটা ইলিশ মিলছে না। সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনের টুমচরে নিয়মিত কালাবদর নদীতে ইলিশ ধরেন রিয়াজ হোসেন। জেলে রিয়াজ বলেন, নানা নিষেধাজ্ঞার পর কয়েক মাস যে মৌসুম থাকে, তখন মাছ না মিললে তাঁদের না খেয়ে মরতে হয়। সায়েস্তাবাদের আড়িয়াল খাঁ নদের জেলে রহিম উদ্দিন বলেন, ক’দিন ধরে কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে তা কাঙ্ক্ষিত না।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, মৌসুম শুরু হওয়ায় এখন ইলিশের দেখা মিলবে। বন্যার কারণে পানি ঘোলাটে হওয়ার কারণে মাছ নেই নদীতে।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, গত সোমবার থেকে পূর্ণিমার জো শুরু হয়েছে। পানিও বাড়ছে। যে কারণে নদীতে ইলিশ কিছুটা ধরা পড়ছে। গত সপ্তাহে মোকামে ১০০ থেকে ১৫০ মণ ইলিশ উঠেছে। তবে গত কয়েক দিন হাজার মণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এর বড় অংশই সাগর মোহনার। জেলেরা এই ইলিশ সাগর থেকে ধরে আনছেন কিনা, এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।