জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। আর এ দেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।
প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে এ জেলার মানুষের। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, নদীভাঙন, নদীতে পানির জোয়ার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানকার জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর এসব দুর্যোগে শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
কালীগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক এলাকার নারী ও শিশুরা বিভিন্ন রোগের কবলে পড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি এবং এর উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
গত কয়েক বছর যাবৎ একের পর এক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে এখানকার অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে। নদী গর্ভে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় অনেকে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে অন্য জায়গায়।
বর্তমানে কালীগঞ্জের উপকূলীয় মথুরেশপুর ইউনিয়নের হাড়দ্দহা গ্রামের আব্দুস সবুর, সজীব হোসেন, শের আলী, হাসানুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে কালিন্দী নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়ে তলিয়ে যায় তাঁদের বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ মৎস্যঘের। তাঁরা আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কয়েক মাস পর হঠাৎ একদিন রাতে ৫-৬ মিনিটের একটি ঝড়ে তাঁদের হাড়দ্দা এলাকার প্রায় ২০টি বাড়ি লন্ডভণ্ড হয়ে যায়। এ ছাড়া কয়েকবার অতিবৃষ্টির কারণে তাঁদের ফসলি জমিসহ মৎস্যঘের ডুবে যাওয়ায় তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিন্দু নারী উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল মাওয়া বলেন, সব ধরনের দুর্যোগেই নারী, কিশোরী, গর্ভবতী, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীরা অধিক ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। ঘরহারা নারী ও কিশোরীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে এবং যৌন হয়রানির স্বীকার হয়। বয়স্ক, গর্ভবর্তী এবং প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সমস্যা দেখা যায়। এর পাশাপাশি সকলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। শিশুরা নানান ধরনের সংকটে পড়ে। নারী-শিশুরা বাল্য বিবাহের শিকার হয়।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় জেলা প্রশাসক হুমায়ূন কবির বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর জোয়ার বৃদ্ধির ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি যাতে প্রবেশ না করে, সে জন্য বাঁধগুলো টেকসই করার চেষ্টা করছি।’
জলাবদ্ধতা দূরসহ আরও যে সমস্যা রয়েছে সেগুলোকে রোধ করার জন্য জেলা প্রশাসক অফিস কাজ করছে বলে জানান তিনি।