জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে অদ্ভুত এক ভাবনা এসেছিল আইয়ুব বাচ্চুর মাথায়। অবশ্য তখনো তিনি জানতেন না, কিছুদিন পরেই মারা যাবেন। তাই বিপুল উৎসাহে এবি কিচেনে রান্না করে যাচ্ছিলেন গান।
তিনি ভাবছিলেন, সব সময়ই তো দেখা যায় একজন গান লিখেছেন, একজন সুর করেছেন আর সেই গানে ২৫ জন, ৫০ জন, ১০০ জন বা তারও বেশি মানুষ গানটি গেয়েছেন। এর ঠিক উল্টো হলে কেমন হয়? অর্থাৎ যাঁরা গান শোনেন, তাঁরাই লিখবেন। তাঁরা নিজেরা কি দুই কলম লিখতে পারেন না? প্রেমিকাকে কি চিঠি লেখেন না কেউ কিংবা প্রেমিককে প্রেমিকা?
এ নিয়েই ফেসবুকে একটা আহ্বান জানিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। মনোয়ারুল হক তাঁর এই কাজে সহযোগিতা করেছিলেন।
আইয়ুব বাচ্চুর লেখা দুটি লাইন ছেড়ে দেওয়া হলো ফেসবুকে এবং আহ্বান জানানো হলো, সবাই একটা করে লাইন যেন লিখে দেন। এরপর একটার পর একটা লাইন আসতে লাগল। কোন লাইন কোথায় বসলে জুতসই হবে, সেটা দেখার ভার পড়ল মনোয়ারুল হকের ওপর।
প্রায় ২৫ জন মানুষের লেখা পঙ্ক্তি থেকে তৈরি হলো একটি গান। হয়ে গেল সুর। সেটা করলেন আইয়ুব বাচ্চু নিজেই।
গানের মুখটা দাঁড়াল এ রকম:
নেমেছে সে একা পথে কাকডাকা ভোরে
তপ্ত দুপুরে কিংবা শীতের প্রহরে
ত্রি চক্রের বহরে...
এভাবেই এগিয়ে গেছে গানটি।
একটা মিউজিক ভিডিও করার ইচ্ছে ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। একজন রিকশাচালককে নিয়ে তৈরি হয়েছিল গানটি। এই গানের ভাবনা আসার পর আইয়ুব বাচ্চু তরুণ গীতিকার-সুরকারদের একটি মেসেজও দিতে চেয়েছিলেন। বলতে চেয়েছিলেন, নিজের হৃদয়টা খুলে ধরো। দৃষ্টিভঙ্গি উদার করো। চোখ খুলে রাখো। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখো মনে। গানটি তৈরি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর সেটা কী অবস্থায় আছে, জানা যায় না।
সূত্র: জাহীদ রেজা নূর, ধন্যবাদ জাকারবার্গ, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫