১৯৯৫ সালের মার্চের শেষে স্ত্রী সুরাইয়া তুতুলের চিকিৎসার জন্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস গিয়েছিলেন কলকাতায়। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পর জানা গেল, রোগীর অবস্থা ভালো নয়। তাই ভেলোরে যাওয়া স্থির হয়েছে। দিনটি ছিল শুক্রবার। রোববারে ফেয়ারলিতে টিকিট করতে যাবেন। তার আগে শনিবার এখানকার চিকিৎসকের নির্দেশে সুরাইয়া তুতুলের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।
রোববার মিহির সেনগুপ্ত যেন ফেয়ারলিতে থাকেন, সেই অনুরোধ করেছিলেন ইলিয়াস। মিহির পৌঁছে দেখলেন, ইলিয়াস এরই মধ্যে চলে এসেছেন। বুকিং কাউন্টারে বিদেশি রোগীদের বিশেষ কোটায় টিকিট কাটার ফরম ফিলআপ করতে হয়। রোববার ছুটির দিন বলে বিশেষ কাউন্টারে খুব একটা ভিড় ছিল না। যথারীতি টিকিট তৈরি। কম্পিউটার থেকে টিকিট বের হওয়ার আওয়াজ শেষ হওয়ার আগেই ইলিয়াসের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ‘পার্স ফ্যালাইয়া আইছি হালায়! অহন উপায়!’
অর্থাৎ টাকার ব্যাগটা আনেননি সঙ্গে।
এ পকেট-ও পকেট হাতড়ে ইলিয়াস আবার বললেন, ‘হালার এমন ভাদেইম্মা বলদ আমি জিন্দেগিতেও দেখি নাই। মানে নিজের কতা কইতাছি!’ এরপর মিহিরকে বললেন, ‘তুমি এক কাম করো, তুমি এইখানে খাড়াও, আমি ট্যাক্সি নিয়া এই গেলাম আর আইলাম।’
কাউন্টারের লোকটি তো হতভম্ব। মিহির বুঝিয়ে বললেন, ‘টাকা আনতে ভুলে গেছে। টালিগঞ্জ গেল টাকা আনতে।’
‘খ্যাপা নাকি?’ বললেন কাউন্টারের লোকটা।
একটু পরেই ফিরে এলেন ইলিয়াস। মুখে নির্মল হাসি। হাতে টাকা। মিহিরকে বললেন, ‘ইশ্, গোটা দশেক টাকা দণ্ড হলো বটে, কিন্তু বাসায় গেলে কী বেইজ্জত হতাম, বলো তো?’
মিহির বললেন, ‘দশ টাকা দণ্ড হলো মানে?’
ইলিয়াস: ‘আরে, নেমেই দেখি ট্যাক্সি। আমার মাথায় পার্সের চিন্তা। ট্যাক্সিতে উঠেই বুদ্ধি খুলে গেল। ট্যাক্সি টার্ন নিতে না নিতেই ব্যাগের চেইন খুলে দেখি টাকা সেখানেই আছে। আসলে পার্স আনিইনি। ফোলিও ব্যাগটার মধ্যেই টাকা এনেছিলাম। ট্যাক্সিচালককে দশ টাকা দিয়ে চলে এলাম।’
কেনা হলো ভেলোরের টিকিট।
সূত্র: মিহির সেনগুপ্ত, অন্তরঙ্গ ইলিয়াস