শহীদুল ইসলামের বয়স ৩৫ বছর। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বড় ভাই বিয়ের পর করছেন আলাদা সংসার। মেজ ভাই মৃত। শহীদুলের বাবাও মৃত। শহীদুলের দিনটা কাটে গাছের সঙ্গে। লোহার শিকলের এক প্রান্ত গাছে বাঁধা, অপর প্রান্ত শহীদুলের পায়ে বাঁধা। আর রাত কাটে চৌকিতে বাঁধা অবস্থায়।
গত ১২ বছর ধরেই এভাবে চলছে তাঁর দিনাতিপাত। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর একমাত্র ভরসা বৃদ্ধ মা কাজুলি বেগম। খাওয়া–দাওয়া, গোসল সবাই করতে হয় মায়ের সাহায্যে। জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই শহীদুল মানসিক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতায় কোনো রকম চলে দিন। কিন্তু উপার্জনের কেউ না থাকায় হচ্ছে না চিকিৎসা।
শহীদুল ইসলাম টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের মহানন্দনপুর গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছোট ছেলে। তাঁকে নিয়ে কষ্টে কাটছে মা কাজলি বেগমের। ছেলের এই অসহায়ত্ব দেখে দুশ্চিন্তায় মা।
কাজলি বেগম বলেন, ‘কবিরাজ দিয়া অনেক চিকিৎসা করাইছি, কিন্তু সুস্থ হয় নাই। এখন বড় হইছে, কথাবার্তা কম কয়। সুযোগ পাইলেই এদিক-ওদিক চইল্যা যায়, ভয়ে থাকি। এ জন্যে বাধ্য হয়ে পায়ে শিকল দিয়া বাইন্দা রাখি। সংসারে উপার্জন করবে এমন কেউ নেই। তাই চিকিৎসা করাতে পারি না। একমাত্র চিন্তা, আমি মরে গেলে, এই পাগলটাকে দেখবে কে?’
১২ বছরের বেশি সময় ধরে শহীদুলের দুই পায়ে লোহার শিকল পরানো। শিকলে লাগানো রয়েছে দু’টি তালা। মাঝে মাঝে নজরদারি রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এ সময় তিনি স্থানীয় বাজারে ঘোরাঘুরি করেন। তবে কারওর সঙ্গে তিনি কথা বলেন না। শহীদুলের বাবা আজিম উদ্দিন প্রায় ৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মারা যাওয়ার পর মানুষের সহযোগিতায় কোনো রকম সংসার চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘তাঁর নামে একটি কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা পান। ওই টাকা দিয়েই কোনো রকম তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু চিকিৎসা হয় না।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শহীদুল ও তাঁর মা একসঙ্গে থাকেন। তাঁরা প্রকৃতপক্ষে অসহায়। তাঁদের যে টাকা ভাতা দেওয়া হয়, তাতে চলে না। অর্থের অভাবে তাঁর চিকিৎসাও হয়নি। চিকিৎসা করাতে পারলে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারী বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শহিদুলের শিকলবন্দী জীবনের কথা শুনেছি। তাঁর বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’