একসময় বনফুলের প্রভাবে অণুগল্প লিখতেন আনিসুজ্জামান। এক পৃষ্ঠায় এক একটা গল্প। অর্থাৎ ওয়ান মিনিট স্টোরি নামে যে গল্প লেখার ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল, সে রকম লেখা। এরপর গল্পগুলো একটু একটু বড় হতে শুরু করল। নেশাটা থাকল এমএ পড়ার সময় পর্যন্ত। তারপর একসময় মনে হলো, গল্পগুলো এমন কোনো জায়গায় দাঁড়াচ্ছে না, যে না লিখলে বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হবে। বাংলা সাহিত্যকে ঠিক জায়গায় রাখার জন্য তিনি নিজে লেখা ছেড়ে দিলেন। পাছে মায়া লাগে, তাই সেই গল্পগুলো বড় খামে ভরে ফেলে দিয়েছেন।
অন্য অনেকের মতো উপন্যাসও লেখার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু দুই-তিন অধ্যায় লেখার পর আর আগ্রহ ধরে রাখতে পারেননি। নব্বইয়ের দশকের কোনো এক সময় মইনুল আহসান সাবেরের অনুরোধে একটা গল্প লিখেছিলেন।
এরপর চেষ্টা করেছেন মঞ্চনাটক লেখার। সেটাও কিছু হচ্ছে না বলে ফেলে রেখেছেন। আর সে পথে হাঁটা হয়নি।
পড়তে পছন্দ করতেন বলে আজিজ সুপার মার্কেটটি বইয়ের বাজার হিসেবে উপস্থাপিত হতে দেখে খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু জীবদ্দশায়ই সেই মার্কেটটি কাপড়ের বাজারে পরিণত হয়েছে দেখে হতাশ হয়েছেন। পড়ার সংস্কৃতির জায়গায় দেখার সংস্কৃতি বেশি করে জড়িয়ে ধরায় হতাশ হয়েছেন। ‘দেখাশোনা’ শব্দটা পাল্টে কী করে ‘দেখভাল’ হয়ে গেল, সেটাও তো দেখলেন।
পেঙ্গুইনের বই জ্যেষ্ঠ কারও কাছে পেয়ে যেতেন। আলেক্সেই আরবুঝভের ‘অ্যান ওল্ড-ওয়ার্ল্ড’ পড়ে এত ভালো লেগে গেল যে ‘পুরোনো পালা’ নামে করে ফেললেন অনুবাদ। অনুবাদটা ভালো হয়েছিল। তখন অনেকেই তাঁকে আরও বেশি বেশি অনুবাদ করার অনুরোধ করলেন। সেই উৎসাহে এবার সামনে এলেন অস্কার ওয়াইল্ড। প্রায় খেলাচ্ছলেই বসলেন অনুবাদ করতে। ওয়াইল্ডের ‘অ্যান আইডিয়াল হাসবেন্ড’-এর অনুবাদ করলেন ‘আদর্শ স্বামী’ নামে।
অনুবাদের সময় মূল বিষয়টি ঠিক রেখেছিলেন। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির পটভূমিকার সঙ্গে যা মেলে না, সেগুলো বাদ দিয়েছিলেন।
সূত্র: দীপ্র মনীষা, পৃষ্ঠা ৫৪-৫৮