সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান গত বৃহস্পতিবার রাতে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি না পাওয়ায় গতকাল বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসেন তিনি।
মুরাদ হাসান দেশে ফিরবেন এমন সংবাদে গতকাল দুপুর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান-বন্দরে ভিড় ছিল উৎসুক জনতারা। ছিলেন গণমাধ্যম কর্মীরাও। এরই মধ্যে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় আসেন তিনি। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভিআইপি টার্মিনালে গেট দিয়ে বের হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সবার চোখকে ফাঁকি দিতে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হয়ে যান তিনি।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে নিজের ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় না গিয়ে তিনি উত্তরায় এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছেন বলে জানা গেছে।
ফিরলেন মুখ ঢেকে
বিমানবন্দরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, মুরাদ হাসান একটি ধূসর রঙের হুডি পরে আছেন। কালো রঙের ক্যাপ এবং একই রঙের একটি মাস্ক পরে ছিলেন তিনি। হুডি, ক্যাপ এবং মাস্ক এমনভাবে তিনি পরেছিলেন যাতে দূর থেকে কেউ তাঁকে চিনতে না পারে। এ ছাড়া বাদামি রঙের একটি সাইড ব্যাগ এবং লাল রঙের ট্রলি তাঁর হাতে ছিল। ৫৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা গেছে মুরাদ হাসান নিজের চেহারা লুকাতে চেষ্টা করছেন। মুখ ঢেকে মুরাদের ঢাকা ফেরার ছবি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিমানবন্দরে ৬৪ ঘণ্টা
নারীর প্রতি অশোভন মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে বিতর্কের পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মঙ্গলবার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। এরপরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২১ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের বিকে ৫৮৫৮ নম্বর ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কানাডার উদ্দেশে রওনা দেন। দুবাইয়ে যাত্রা বিরতি শেষে শুক্রবার কানাডার সময় বেলা ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টোর পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন বলে সে দেশের বাংলা গণমাধ্যম নতুন দেশের খবরে বলা হয়।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা মুরাদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে দুবাইয়ের ফিরতি আরেকটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের আপত্তির মুখেই কানাডার সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয় বলে তারা দাবি করে। তবে এমন বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেনি গণমাধ্যমটি। আরেকটি সূত্র বলা হচ্ছে, করোনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণেই মুরাদকে কানাডার ইমিগ্রেশন ফিরিয়ে দেয়।
কোভিড প্রটোকল না মেনে কীভাবে মুরাদ হাসান হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করলেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এখন। বিষয়টি নিয়ে গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান, সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল অ্যাভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের না। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দিই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। মুরাদের এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তাঁরা ভালো উত্তর দিতে পারবেন।’
বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলছেন, ‘সদ্য অব্যাহতি নেওয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বিষয়ে আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন তারা দিতে পারবেন।’
সংসদ সদস্যরা কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। এই পাসপোর্টে তিনি কানাডায় যাত্রা শুরু করেছিলেন মুরাদ হাসান। কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করলেও যাত্রার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাননি তিনি। তাই টরন্টো পিয়ারসন্স বিমানবন্দরে প্রটোকলের ব্যবস্থা করা হয়নি।
এ বিষয়ে গত শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের সংসদ সদস্যরা বাইরে গেলে সরকারি প্রটোকল পেয়ে থাকেন। তবে তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে হয়। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পক্ষ থেকে প্রটোকলের জন্য তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।
মুরাদের নামে চার মামলা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এক টক শোতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শেখ মহিউদ্দিন হেলালকেও আসামি করা হয়।