১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করল রেসকোর্স ময়দানে। রেডিওতে সেই খবর শুনেছেন অবরুদ্ধ শেখ হাসিনা। তাঁর মনে ভেসে উঠল কয়েক মাস আগের ৭ মার্চের কথা। এই রেসকোর্সেই বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক। আনন্দ-উল্লাস যে চোখে পানি নিয়ে আসতে পারে, সে কথা কে জানত!
দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরিবার তখনো ধানমন্ডির একটি বাড়িতে অবরুদ্ধ। বেগম মুজিব পাকিস্তানি হাবিলদারকে ডেকে বললেন, ‘তোমাদের নিয়াজি সারেন্ডার করেছে। তোমরাও করো।’
হাবিলদার বলল, ‘নিয়াজি কর সাকতা হ্যায়, হাম নেহি করেঙ্গে।’
যে গাড়িই এই রাস্তা দিয়ে আসতে থাকল, তার দিকে পাকিস্তানিরা গুলি চালাতে লাগল। কেউ কেউ আহত হলেন।
এ সময় কাদেরিয়া বাহিনীর একটি খোলা জিপ ব্যানারসহ স্লোগান দিতে দিতে গেল। ওপর থেকে তাদের দিকে মেশিনগানের গুলি চালাল পাকিস্তানিরা। কিন্তু জিপটি দেখে শেখ রেহানা ‘মুক্তিবাহিনী, মুক্তিবাহিনী’ বলে জানালায় উঠে হাততালি দিতে থাকলেন। শেখ হাসিনা তাঁকে বকা দিয়ে জানালা থেকে নামালেন। জয় তখন একেবারেই ছোট। ওকে একবার রাসেল, একবার খোকা কাকা, একবার শেখ রেহানা, একবার বেগম মুজিব কোলে নেন, আর অপেক্ষা করেন, কখন আসবে মুক্তি।
১৬ ডিসেম্বর কেটে গেল গোলাগুলিতে।
১৭ ডিসেম্বর কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক এসেছিলেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের ঢুকতে দেয়নি বাড়িতে। এরই মধ্যে ভারতীয় সৈন্যরা ঘিরে ফেলল ধানমন্ডির সেই বাড়ি। সারেন্ডার করার জন্য চাপ দিল। কিন্তু সেই হাবিলদার কিছুতেই সারেন্ডার করবে না। কিছুক্ষণ পর দুই ঘণ্টা সময় দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হলো। শেখ হাসিনা চিৎকার করে বললেন, ‘দুই ঘণ্টা সময় দিলে ওরা আমাদের হত্যা করবে!’
আধা ঘণ্টা সময় দিয়ে ভারতীয় সেনারা সেখানেই থাকল ওদের ঘিরে। ওরা কাঁপতে কাঁপতে সারেন্ডার করছিল। দরজা উন্মুক্ত। পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে নেওয়া হলো বাড়ি থেকে। শেখ হাসিনার চোখে পানি। কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।
সূত্র: শেখ হাসিনা, স্মৃতির দখিন দুয়ার, শেখ মুজিব আমার পিতা, পৃষ্ঠা ৫১-৫৩