গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের বিকাশ ও সংস্কৃতি মনস্ক করে গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগে গঠন করা হয় কিশোর-কিশোরী ক্লাব। ক্লাব পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর। এই প্রকল্পে প্রতি মাসে নাশতা খরচ ও বেতন বাবদ প্রায় দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ফলাফল শূন্যের কোঠায়।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে চারঘাট উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ৭টি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী ২০ জন কিশোরী ও ১০ জন কিশোর নিয়ে গঠন করা হয়েছে ক্লাবগুলো। তাঁদের আবৃত্তি ও সংগীতচর্চা করার জন্য প্রতি ক্লাবে দুজন শিক্ষক এবং তদারকির জন্য সব ক্লাবের জন্য দুজন জেন্ডার প্রমোটর নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিদিন ক্লাসে নাশতার জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা বরাদ্দও রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের সব কর্মযজ্ঞ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা মহিলা অধিদপ্তরকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহিলা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের কাছাকাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়। চারঘাটের কেন্দ্রগুলো হলো চারঘাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নন্দনগাছী উচ্চ বিদ্যালয়, সালেহ শাহ মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় ও শলুয়া উচ্চবিদ্যালয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সংস্কৃতিচর্চার জন্য হারমোনিয়াম, তবলার বরাদ্দ থাকলেও শুধু পৌরসভার একটি কেন্দ্রে তা দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নের ছয়টি ক্লাবে লুডু, দাবা, ক্যারম ছাড়া কোনো কিছুই এখনো সরবরাহ করা হয়নি। আবৃত্তিচর্চার জন্যও কোনো উপকরণ নেই।
দুজন শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় নন্দনগাছী উচ্চবিদ্যালয় ক্লাবের দুই শিক্ষক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ক্লাবগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার অথবা শুক্র ও শনিবার ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে ক্লাস হয় না। কিন্তু মাসিক ব্যয়, শিক্ষকের বেতন সবই ঠিকমতো চলছে।
স্থানীয় নারী নেত্রী আফসানা শারনিন বলেন, ইভ টিজিং বন্ধ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, জন্মনিবন্ধন, শিশু অধিকার, নারী অধিকার ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করতে এসব ক্লাব গঠন করা হয়েছে। তবে বাস্তবে বাল্যবিবাহ বন্ধ কিংবা অন্য সমস্যা সমাধানে এসব ক্লাবের কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলায় ৪ হাজার ৮৮৩টি ক্লাব একযোগে উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। এর মেয়াদকাল ধরা হয় ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে চারঘাট উপজেলায় ৭টি ক্লাব চালু করা হয় ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে। কিন্তু দীর্ঘ ২ বছরেও চারঘাটের ক্লাবগুলোতে ক্লাস নেওয়ার সামগ্রী পৌঁছেনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহফুজা বেগম জানান, করোনা শুরু হওয়ায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষার কারণে বিভিন্ন সময়ে ক্লাস চালু রাখা হয়েছে। হারমোনিয়াম, তবলা সব তৈরি করা আছে। শিগগির প্রত্যেক কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে লুডু, ক্যারম ও দাবা সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য কার্যক্রম যথানিয়মেই করা হচ্ছে।