সাতক্ষীরার তালায় জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় পাখি রক্ষার্থে কৃত্রিম বনায়ন ও কীটনাশক ব্যবহারে হ্রাস করতে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার অধিকাংশ জমিতে আগাছা নাশক কীটনাশক ও জমির মাটি শোধনে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়েছে। তা ছাড়া চোরাপথে ভারত থেকে আসা উচ্চ দূষণীয় কীটনাশক অবাধে ব্যবহার করা হয় এই এলাকার জমিতে। অপরদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন ও পাখিদের অভয়ারণ্যে লোকালয় গড়ে ওঠার কারণে নাম না জানা পাখিদের বংশবিস্তার ঘটছে না।
যেসব পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেসব হলো দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠঠোকরা, ফ্যাসকো কোকিল, ডাহুক, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া, পাতিহাঁস, সরালি, রাতকানা, কানা বক, লাল বক, জ্যাঠা বক, জলকুকু, ঠোঁটভাঙ্গা, ধুসরকোয়েল, তোতাপাখি, ঝেজেঘুঘূ, ধলাঘুঘু, সুঁইচোর, পানকৌড়ি, দৈরাজ, সাতভায়রা, ডুবডুবি, গাংচিল, ফেচকে, চাকলা, দোলকমল, দইরাজ প্যাঁচাসহ আরও অনেক নাম–না জানা পাখি।
তালা উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামের ৬২ বছর বয়সী প্রবীণ কৃষক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগে জমিতে কীটনাশক দিতাম না। তখন হরেক রকমের পাখি ধানের পোকা খেয়ে ফেলত। তবে আজ আর সেসব পাখি দেখা যায় না, পাখির ডাক শোনাও যায় না।’
একই উপজেলার কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘একসময় পাখির কাকলীতে ঘুম ভাঙত এ উপজেলার মানুষের। কিন্তু এখন আর আগের মতো আর পাখির ডাক শোনা যায় না।’
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি দিয়ে তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস জানান, কীটনাশকের মধ্যে ডিডিটির প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী। অব্যাহত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাণী দেহে সুপ্ত বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসবের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হচ্ছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও রয়েছে।