মিঠাপুকুরে সুপারির ফলনে এবার হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগানমালিকেরা। বাজারে দরেও বেশি থাকায় খুশি তাঁরা।
দেশের উত্তর জনপদের লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে পান-সুপারির রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম উপাদান এটি। যেকোনো অনুষ্ঠানে পান-সুপারির রয়েছে বাড়তি কদর।
মিঠাপুকুরে অনেকে বংশপরম্পরায় সুপারি উৎপাদন করে আসছেন। গত রোববার উপজেলার শঠিবাড়ি হাটে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
হাটে সুপারি নিয়ে আসা উপজেলার নানকর এলাকার সাদা মিয়া জানান, তাঁর তিন বিঘা জমিতে বাগান রয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। আরও ২ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
সাদা মিয়া বলেন, প্রতি বিঘায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ গাছ লাগানো যায়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করা যায়।
এই অঞ্চলে ‘বিশি’ ও ‘গা’ হিসেবে সুপারি বিক্রি করা হয়। ১০টি সুপারিতে হয় এক গা আর ২২ গা মিলে হয় এক বিশি। বর্তমানে বাজারে প্রতি বিশি সুপারি ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
হাটে কথা হয় পীরগঞ্জের হিলি গ্রামের বজলার রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর ১০০ গাছে সুপারি ফলেছে। গত রোববার প্রথম বিক্রি করতে এসেছিলেন। ৩ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। আরও ২৭ হাজার টাকার সুপারি গাছে রয়েছে।
শঠিবাড়ি হাটে অন্য জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নেন। রোববার কুড়িগ্রামের রাজারহাট থেকে আসা মাহফুজার রহমান জানান, তাঁদের বংশগতভাবে সুপারির ব্যবসা রয়েছে। তিনি সুপারি কিনে বগুড়ায় বিক্রি করেন।
পীরগঞ্জের মিঠিপুর গ্রামের শামছুল ইসলাম জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে সুপারির ব্যবসা করেন। এতে তাঁর মাসে ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। পুঁজি কম তাই আয় বেশি হয় না বলে জানান তিনি।
এদিকে উপজেলায় পান-সুপারি বিক্রি করে শত শত ব্যক্তি জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাজারে প্রতিটি খিলি পান পাঁচ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে শহরে বিশেষ ধরনের খিলি পান কিনতে ১৫ থেকে ৫০ টাকা লাগে।
পান-সুপারিতে আসক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া জানান, তিনি দিনে ৪০ থেকে ৫০টি খিলি পান খেতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর পান-সুপারি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় সুপারি চাষের কোনো প্রকল্প নেই, তবে দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে।