পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন এখন আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। অথচ এখন তার থাকার কথা সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে। এমন ঘটনা দেখা যায় পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের মামলায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ১২ আগস্ট মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা মৃত মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে ৮৪ লাখ টাকা দাবি করে প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের একটি মামলা করেন। মামলায় ৮ বছর বয়সী চয়নকেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে। আর এতে চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর।
এদিকে গতকাল বুধবার চয়ন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালত আবেদনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে শিশু চয়ন ও তার ১৭ বছর বয়সী বোনকে জামিন দেন। এ ঘটনায় আদালত পাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শিশু চয়নসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয় চয়নের বাবা মরহুম মাসুম তালুকদার কলাপাড়া উপজেলার লেমুপাড়া মৌজায় ১২ একর জমি বিক্রি করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা নিলেও জমির দলিল দেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের মামলাটি দায়ের করা হয়। বাদী মাসুম বিল্লাহ পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
শিশু চয়নের মা সাবরিনা বিশ্বাস মনু বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের হয়রানি করার জন্য এবং আমাদের জমিজমা দখল করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’
চয়নের আইনজীবী সোলায়মান সিকদার জানান, কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন মাসুম তালুকদার। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মাসুম তালুকদার মারা যাওয়ার পর মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৮৪ লাখ টাকা দাবি করে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে এ বছরের ১২ আগস্ট পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
আইনজীবী সোলায়মান সিকদার আরও জানান, ওই মামলায় শিশু চয়নের বয়স উল্লেখ করা হয় ২২ বছর। প্রকৃতপক্ষে জন্মনিবন্ধন অনুয়ায়ী চয়নের জন্মতারিখ ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি। এ ছাড়া চয়নের বোনের বয়স ১৭ বছর হলেও তার বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া চয়নের মা, দাদিসহ ওই মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে আসামিরা আদালতে হাজির হন। বুধবার আসামি হিসেবে শিশু চয়ন ও তার পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত হলে আদালতে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হয়।
চয়নের আইনজীবী সোলায়মান সিকদার আরও জানান, পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠান। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু চয়ন ও তার বোনকে জামিন দেন এবং বাদীর পক্ষের আইনজীবীকে তলব করেন।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। যা বলার আদালতে বলব।’
পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিচার প্রার্থী ও আইনজীবীদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’