কমিউনিস্ট নেতা জসীম উদ্দীন মণ্ডল তখন ঢাকা জেলে। পত্রিকায় খবর বের হলো, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। খবরটা শুনে জসীম উদ্দীন মণ্ডলের মনটা ছটফট করতে লাগল। সবার পরামর্শে তিনি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলেন। আবেদন মঞ্জুর না হলে অনশন ধর্মঘট করবেন। আবেদন মঞ্জুর হলো। তিন দিনের প্যারোল। একজন এএসআই আর চারজন পুলিশসহ তাঁকে পাঠানো হলো ঈশ্বরদীতে। কিন্তু ঈশ্বরদীতে সরাসরি বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাঁকে প্রথমে রাখতে হবে পাবনা জেলে। তারপর ডিসির অনুমতিক্রমে তাঁকে আসতে হবে ঈশ্বরদীর বাড়িতে।
ঈশ্বরদী থেকে পাবনা রওনা হওয়ার আগেই তিনি জানতে পারলেন, তাঁর স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা একটু ভালো। কিন্তু চিন্তিত হয়ে পড়লেন, পথেই যদি দুদিন কেটে যায়, তাহলে বাড়ি গিয়ে কতক্ষণই বা থাকতে পারবেন? তাঁর এই শঙ্কার কথা তিনি জানালেন ডিসি সাহেবকে। ডিসি সাহেব হেসে বললেন, ‘প্যারোল শুরু হবে আপনি আপনার বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে।’ তার মানে তিনটি দিন তিনি পাচ্ছেন।
বাড়ি গেলেন। সবাই আনন্দে ভাসছে। স্ত্রীর মুখেও হাসি। ছোট্ট বাড়ি বলে পুলিশদের সেখানে রাখা যাচ্ছে না। তাদের রাখা হলো অদূরে এক বাড়িতে। তাঁরা মাঝে মাঝে এসে বলতে লাগল, ‘মণ্ডল সাহেব, আছেন তো?’
বিদায়ের সময় উপস্থিত হলো। কদিন পর ঈদ। পরিবারের মানুষেরা বিমর্ষ। গভর্নরের কাছে আবেদন করা হলো ঈদটা প্যারোলে বাড়ির মানুষদের সঙ্গে কাটিয়ে দেওয়া যায় কি না। সে খবর বের হলো সংবাদ পত্রিকায়। গভর্নর প্যারোলের মেয়াদ বাড়ালেন। সমস্যা হলো, যে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন, তাঁদের তো ঈদ নষ্ট হয়ে যাবে! ম্যাজিস্ট্রেট এসে জসীম মণ্ডলকে বললেন, ‘আপনি যদি অঙ্গীকারপত্র দেন যে পালাবেন না, তাহলে পুলিশদের ছুটি দিতে পারি।’ অঙ্গীকারপত্র দিলেন জসীম মণ্ডল। পুলিশ সদস্যরা চলে গেলেন নিজ বাড়িতে ঈদ করতে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করে জসীম মণ্ডল ফিরলেন কারাগারে।
সূত্র: জসীম উদ্দীন মণ্ডল, জীবনের রেলগাড়ি, পৃষ্ঠা ১১১-১১৬