প্রশ্ন: ডারবান টেস্টে সুযোগ পাননি। উইকেট দেখে কি আফসোস হচ্ছিল? যেভাবে দুই প্রোটিয়া স্পিনার সফল হচ্ছিল।
তাইজুল ইসলাম: এখানে আফসোসের কিছু নেই। দলের সমন্বয়ের ব্যাপার আছে। আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে এমন একটা উইকেট হতে পারে, এটা কেউ আশা করতে পারেনি। উইকেটে ঘাসও ছিল। উইকেট যে এমন আচরণ করবে, সেটা কেউই ধারণা করেনি।
প্রশ্ন: পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে সুযোগ পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। একজন স্পিনার হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরেও ধারাবাহিক ভালো করা কতটা কঠিন?
তাইজুল: ক্রিকেট সব সময় চ্যালেঞ্জের খেলা। আপনি যেখানেই খেলেন না কেন, ভালো করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো করলে সবকিছুই সহজ লাগবে। আর না পারলে সব জায়গাই কঠিন। সব সময়ই চেষ্টা করি, যেন ভালো করতে পারি।
প্রশ্ন: টেস্ট সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। কত দূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
তাইজুল: ইচ্ছা আছে অনেক দূর যাওয়ার। আমার স্বপ্ন ৩০০ উইকেট পাওয়া। দেখা যাক, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
প্রশ্ন: যেহেতু শুধু টেস্টে খেলেন। লম্বা বিরতির পর পর খেলতে নামা ভালো করা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
তাইজুল: লম্বা বিরতির পর খেলাটা আসলে চ্যালেঞ্জিং। ব্যক্তিগতভাবে একটু চাপ আসে, অন্য কোনো দিক থেকে না। তবু ক্রিকেট চাপ নিয়েই খেলতে হয়। চাপ আসবেই এবং সেটা সামলে চলতে হবে।
প্রশ্ন: দলের স্পিন পরামর্শক রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে বেশ কদিন কাজ করেছেন। তাঁর কোন পরামর্শটা আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে? নতুন কিছু যোগ করেছেন তাঁর সঙ্গে কাজ করে?
তাইজুল: ক্রিকেটে টেকনিক্যাল কিছু জিনিস থাকে। একটা কোচের দায়িত্ব হচ্ছে, আমার কোনো ভুল দেখলে সেটা সংশোধন করে দেবেন। আমি বলব, তিনি একজন লিজেন্ড। অনেক ভালো পরামর্শ দেন। আমি তাঁর কাছ থেকে ভালো পরামর্শ নিতে চেষ্টা করি। দেশে সোহেল (ইসলাম) ভাই আছেন, তাঁর কাছ থেকেও সহায়তা নিয়ে থাকি। যখন দলে থাকি, তখন হেরাথ। আর যখন দলে থাকি না, তখন সোহেল ভাইয়ের পরামর্শ নিই।
প্রশ্ন: টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তাঁকে আপনি ১০-এ কত দেবেন? তাঁর কোন বিষয়টা বেশি ভালো লাগে। আর কোথায় তাঁকে আরও উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন?
তাইজুল: ওর (মুমিনুল হক) সব সিদ্ধান্তই আমার ভালো লাগে। অধিনায়ক বলুন কিংবা মানুষ হিসেবে বলুন, সে আমার কাছে সব সময়ই ভালো। তাঁর সবকিছুই ভালো। আমি তাঁকে ১০-এ ১০-ই দেব।
প্রশ্ন: সাকিব আল হাসান না থাকায় যখন আপনার সুযোগ মেলে, তখন কি বাড়তি চ্যালেঞ্জ মনে হয়, যে না কিছু করে দেখাতে হবে আমাকে।
তাইজুল: আমি কখনো এটা অনুভব করি না। আমার দায়িত্ব আমার কাছে। সাকিব ভাইয়ের দায়িত্ব সাকিব ভাইয়ের কাছে। আমি যখন খেলব, তখন আমাকে দায়িত্ব নিয়েই খেলতে হবে। তবে কেউ কারওর জায়গা পূরণ করতে পারে না। আমার জায়গা যেমন সাকিব ভাই পারবেন না, তাঁর জায়গাও আমি পারব না। আমার দায়িত্ব যেটা, আমি সেটাই করে থাকি।
প্রশ্ন: সাকিবের অনুপস্থিতিতে খেলা টেস্টে আপনার পারফরম্যান্স তুলনামূলক ভালো। সাকিব এলে অনেক সময় বাদ পড়তে হয়। এই পরিস্থিতির সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পেরেছেন?
তাইজুল: বিশ্ব ক্রিকেটে তাকালেই দেখবেন যেমন—অক্ষর প্যাটেল (ভারতীয়) এখন দারুণ খেলছে। কিন্তু জাদেজা এলে তার দলে জায়গা হবে না। যখন মুত্তিয়া মুরালিধরন ছিল, তখন কিন্তু হেরাথকে এভাবেই খেলতে হতো। এটা স্বাভাবিক বিষয়। এটা না মেনে আপনি কিছু করতে পারবেন না। মেনে নিয়েই খেলতে হবে।
প্রশ্ন: আগামী মাসে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজ। এ সিরিজে কি বাংলাদেশ পূর্ণ পয়েন্ট, মানে টেস্ট সিরিজ জেতার আশা করতে পারে?
তাইজুল: আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। আর খেলব তো জেতার জন্যই। আমরা জিতে যদি পয়েন্ট টেবিলে একটু ওপরে আসতে পারি, সেটা আমাদের জন্য ভালো।
প্রশ্ন: যদিও আমাদের পেসাররা গত কিছুদিনে ভালো করছে। তবু আপনি কি মনে করেন, যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা, আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজে নিজেদের কন্ডিশন ও শক্তি কাজে লাগিয়ে স্পিনাররাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেবেন?
তাইজুল: কন্ডিশন সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এখন যদি আপনি স্পিন-সহায়ক উইকেট তৈরি করেন, তাহলে স্পিনার বেশি খেলাবেন। যদি পেসসহায়ক উইকেট তৈরি করেন, তাহলে পেস বোলিংয়ে বেশি জোর দেবেন।
প্রশ্ন: ধারাবাহিক ভালো খেললে অনেকের গায়ে তারকাখ্যাতি লেগে যায় এত দিনে ৷ আপনাকে দেখলে সেটা বোঝা যায় না। নিজেকে কখনো আন্ডাররেটেড প্লেয়ার মনে হয়?
তাইজুল: আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় নই। এখানে সক্রিয় থাকা লাগে। খেলা না থাকলে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে সময় কাটাতে স্বচ্ছন্দবোধ করি। আমি মনে করি, আমি ভালো করলে আপনারা (সংবাদমাধ্যম) ভালো লেখবেন এবং না করলে আপনারা নেতিবাচকই লেখবেন।