ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া (৫৩)। দরিদ্র এ প্রতিবন্ধী কারও কাছে হাত পাতেন না। ফুলগাজী সদরের সবজি বাজারে ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালন তিনি।
বাবুল মিয়া স্পষ্ট ভাষায় কথাও বলতে পারেন না। দুই-তিন কেজি ওজনের জিনিসও হাতে বহন করতে পারেন না। অনেক কষ্টে কোনোরকমে হাঁটতে পারেন। তবু বাবুল একজন পরিশ্রমী ও সংগ্রামী মানুষ। ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজেই পরিশ্রম করে যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।
বাবুল মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পারেন না। হাতের সামান্য ওজনের কোনো জিনিসও বহন করতে পারেন না। তারপরও জীবন-জীবিকার জন্য কারও কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম এবং সংগ্রাম বেছে নিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন বাজারে এসে কিছু শাকসবজিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে সেগুলো বিক্রি করেন। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে যান। এর মধ্যে যে সামান্যটুকু লাভ হয়, তা দিয়ে তাঁর পরিবারের জন্য খরচ করেন। তাঁর ছোট্ট সংসার পরিচালনা করেন।
বাবুল মিয়া আরও জানান, তাঁর উপার্জন করার মতো কোনো লোক নেই। পরিবারে চারজন সদস্য। স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে এইচএসসিতে পড়াশোনা করে। ছেলে পড়ছে দশম শ্রেণিতে। সংসারের খরচ চালিয়ে দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ মেটানোয় বেশ সমস্যা হয়। তবু তিনি হাল ছাড়তে রাজি নন। দুই সন্তান পড়াশোনা করে বড় হয়ে সংসারের অভাব ঘোঁচাবে বলে তিনি স্বপ্ন দেখেন। সরকারিভাবে পাওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা তাঁর সংসার চালাতে বেশ সহায়ক হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বাবুল মিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শারীরিক এই অবস্থা নিয়ে বাড়ির বাইরে আসাটাও তাঁর জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তারপরও তিনি জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমরা দোয়া করি, বাবুল মিয়া ও তাঁর পরিবারকে আল্লাহ যেন হেফাজত করেন।’
ফুলগাজী বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও তোয়া বাজারের ইজারাদার মো. সেলিম বলেন, ‘বাবুল মিয়া একজন প্রতিবন্ধী হয়েও সংসার চালাতে প্রতিদিন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাঁর কর্মমুখর জীবনের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁর কাছ থেকে ইজারাদার কোনো টোল আদায় করে না।’