হোম > ছাপা সংস্করণ

অ্যাশেজের আড়ালে অমর প্রেমকাহিনি

হাসনাত শোয়েব, ঢাকা

পৃথিবীর বিখ্যাত সব প্রেমকাহিনি মূলত মিথ। যেখানে বেশির ভাগই অর্ধ সত্য ও অর্ধ মিথ্যার চাদরে ঢাকা। সামান্য কিছু সত্য প্রেমকাহিনি অবশ্য আছে, বাকিদের সঙ্গে যা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। আইভো ব্লাই ও ফ্লোরেন্স মরফির প্রেমকাহিনিও তেমনই। এ নাম দুটি রোমিও-জুলিয়েট কিংবা লাইলি-মজনুর মতো বিখ্যাত নয়। কিন্তু যাঁরা একটু গভীরে গিয়ে ক্রিকেটের খবর রাখেন, তাঁরা জানেন এ নাম দুটির গুরুত্ব। ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর এক দ্বৈরথের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জুটির নাম।

১৮৮২ সালে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তার আগে ইংল্যান্ডে মাত্র একটি টেস্ট খেলেছিল অজিরা, সে ম্যাচে জিতেছিল স্বাগতিকেরা। তবে ওভালে ভিন্ন কিছু করার তাগিদ নিয়ে মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফ্রেডরিখ স্পোফোর্থের অসাধারণ বোলিংয়ে সেদিন ৭ রানে ম্যাচ জিতে নেয় অতিথিরা। এতটুকু পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ইংলিশ মিডিয়া তা মানবে কেন? এখনকার মতো তখনো ইংলিশ মিডিয়ার কাজই ছিল তিলকে তাল, পারলে কাঁঠাল বানিয়ে দেয়! পরদিন ‘দ্য স্পোর্টিং টাইম’ একটি এপিটাফ ছাপাল তাদের পত্রিকায়, যেটার শিরোনাম ‘ওভালে ইংলিশ ক্রিকেটের মৃত্যু হয়েছে’। নিচে একটা ফুটনোট: ‘শব দাহ করা হয়েছে এবং ছাই অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ আর এ ‘অ্যাশ’ অর্থাৎ ‘ছাই’ থেকেই এ লড়াইয়ের নামকরণ করা হয় ‘অ্যাশেজ’।

মিডিয়ার উপহাস ইংলিশ ক্রিকেটারদের মনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরেরবার অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে ইংলিশ অধিনায়ক আইভো ব্লাই সংবাদ সম্মেলনে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিলেন। ইংলিশ মিডিয়াও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সিরিজের নামকরণ করল ‘অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার মিশন’। ক্রিকেট ম্যাচ হঠাৎ করেই যেন রূপ নিল আগুনে উপাখ্যানে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়ে নাটকীয়ভাবে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার অভিযান শেষ করে ইংল্যান্ড। অ্যাশেজ রূপকথা শুরুর গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু নিয়তির ভাবনা ছিল একটু ভিন্ন। ফলে নতুন এক বাঁক নেয় অ্যাশেজ। ক্রিকেটীয় যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়েন ‘ফ্লোরেন্স মরফি’ নামে এক নারী। শুরু হয় নতুন আরেক প্রেমগাথা।

আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাশেজ জয়ের স্মারক হিসেবে স্টাম্পের বেল পুড়িয়ে তার ছাই একটি পাত্রে ভরে উপহার নিয়ে আসে একদল নারী। আর সেই নারী দলের একজন ছিলেন মরফি। পরবর্তী সময়ে ছাইয়ের পাত্রটি হয়ে ওঠে নিম্নবিত্ত অস্ট্রেলিয়ান সংগীত শিক্ষিকা মরফির সঙ্গে উচ্চবিত্ত ব্লাইয়ের প্রেমের প্রতীক। পাশাপাশি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ যুদ্ধের প্রতীকও এ ছাইভরা পাত্রটি। তবে ১৯৯৮ সালে ব্লাইয়ের পুত্রবধূ জানান, পাত্রটিতে যে ছাই ছিল, তা স্টাম্পের বেলের ছাই ছিল না। সেটি ছিল তাঁর শাশুড়ির পোড়ানো ওড়নার ছাই।

১৮৮২-৮৩ সালের সেই সফরে রুপার্টসউডে ছিলেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। সেখানেই ব্লাই ও মরফি প্রেমে পড়েন একে-অন্যের। কিন্তু মরফির পারিবারিক অবস্থান দুজনের প্রেমকে করে তোলে জটিল। অন্যদিকে ব্লাই তাঁর মা-বাবাকে জানান, তিনি মরফিকে বিয়ে করতে চান। তাঁরা তাতে রাজি হননি। পরে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এসে সানবারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মরফিকে বিয়ে করেন ব্লাই।

কিন্তু এ দুজনের মধুর পরিণয়ের পরও গল্পটি শেষ নয়। বিয়ের কিছুদিন পর শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন ব্লাই। তাঁকে ক্রিকেট ছেড়ে দিতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেও কোথাও থিতু হতে পারেননি। কিন্তু ব্লাইয়ের এমন দুর্দশার পরও তাঁকে ছেড়ে যাননি মরফি। ১৯২৭ সালের এপ্রিলে ৬৮ বছর বয়সে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান ব্লাই। তাঁর মৃত্যুর পর অ্যাশেজের সেই ছাইভর্তি স্মারকটি এমসিসিকে হস্তান্তর করেন মরফি, যা পরে লর্ডসের জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমানে অ্যাশেজের যে ছোট্ট ট্রফিটি দেখা যায়, সেটি মূলত রেপ্লিকা বা নকল। ব্লাইয়ের মৃত্যুর ১৭ বছর পর ১৯৪৪ সালে মারা যান মরফি। মৃত্যুর পর মরফিকে সমাহিত করা হয় ব্লাইয়ের কবরের পাশে।

শত বছরের বেশি সময় ধরে অ্যাশেজের আগুনে দ্বৈরথের মধ্যে শীতল স্পর্শ নিয়ে আছেন ব্লাই-মরফি জুটি। আর অ্যাশেজ স্বীকৃতি পেয়েছে ক্রীড়াজগতের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দ্বৈরথগুলোর একটি হিসেবে। আগামীকাল ব্রিজবেনে শুরু হচ্ছে ৭২তম অ্যাশেজ যুদ্ধ।

দূরে কোথাও হাতে হাত রেখে এ যুদ্ধের মধ্যে প্রেমের জয়গান নিয়ে নিশ্চয়ই হাজির থাকবেন ব্লাই-মরফি জুটি!

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ