ঈদের আগে থেকেই ভোজ্যতেল নিয়ে একধরনের তেলেসমাতি কাণ্ড শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে হঠাৎ করে ভোজ্যতেল নিয়ে লুকোচুরি খেলা শুরু হওয়ায় এ দোকান-সে দোকান
ঘুরেও সয়াবিন তেল পাননি ক্রেতারা। ঈদের ছুটি শেষে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মিলমালিকেরা। এক লাফে ভোজ্যতেলের এত দাম বাড়ার ঘটনা সম্ভবত দেশে এবারই প্রথম। খোলা সয়াবিন তেলের ৪৪ আর বোতলজাতের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পাম তেলের দামও।
এখন মনে হচ্ছে দাম বাড়ানোর মতলব থেকেই বাজারে সংকট তৈরি করা হয়েছিল। দাম বাড়লে আগের দামে কেনা তেল বাড়তি দামে বিক্রি করা যাবে—অর্থাৎ অতিরিক্ত মুনাফার আশায়ই তেল লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। আগের আনা তেলই এখন বেশি দামে বিক্রি করে পকেট কাটা যাবে ভোক্তাদের।
রোজার আগে ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে দুই দফা মূল্য সংযোজন কর কমিয়েছে সরকার। এরপর গত ২০ মার্চ সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বছরে ২০ লাখ টন। এর ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করে পূরণ করা হয়। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত আকারে আমদানি করে এবং বীজ আমদানি করে তা ভাঙিয়ে তেল উৎপাদন করে আটটির মতো প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, গত মার্চ ও এপ্রিল—এই দুই মাসে যে পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে তা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আমদানি কমেছে পাম তেলেরও। আগের তুলনায় আমদানি ও বাজারজাত দুটোই কমেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে সংকট দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, এটা তো কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। তা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া গত মাস থেকে পাম তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর্জেন্টিনাও রপ্তানি সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে তদারকি ও মনিটরিং করার ক্ষেত্রে আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে।
রাতারাতি ভোজ্যতেলের সংকট কাটানোর বিকল্প চিন্তা ও পরিকল্পনা করা সম্ভব না হলেও বিকল্পের সন্ধান শুরু করতে হবে এখনই। ভোজ্যতেল আমাদের একটি প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য। তেল ছাড়া রান্না হবে না। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্যের জন্য পরনির্ভরতা বিপজ্জনক। আমদানির উৎসে সংকট হলে আমরাও সংকটে পড়ি। এই অভিজ্ঞতা আমাদের অতীতে কিছু পণ্য নিয়ে হয়েছে। সংকটে না পড়লে আমরা সমাধান নিয়েও ভাবি না। ধানের আবাদ বাড়িয়েছি, গরুর ঘাটতিও কমানো গেছে। ভোজ্যতেল নিয়ে হাহাকার কমানোর উপায়ও বের করতে হবে।