চে গুয়েভারার জীবনটা বর্ণাঢ্য। শৈশবে তাঁর পছন্দের বিষয় ছিল খেলাধুলা ও কবিতা। পড়াশোনা করেছেন চিকিৎসাবিদ্যায়। ২৩ বছর বয়সে বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদোকে নিয়ে মোটরসাইকেলে পুরো লাতিন আমেরিকা পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এরপর বেরিয়ে পড়া। রোমাঞ্চকর সেই ভ্রমণে চিলি, পেরু হয়ে সাও পাওলোর কুষ্ঠরোগীদের কলোনিতে পৌঁছে যান। এখানেই তাঁর জীবনের পরিকল্পনা ঠিক হয়ে যায়।
এরপর ১৯৫৫ সালে মেক্সিকোতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ফিদেল কাস্ত্রোর। স্বৈরশাসক বাতিস্তাকে উচ্ছেদের জন্য তাঁর একজন চিকিৎসক দরকার ছিল। সম্মতি জানাতে এক সেকেন্ডও দ্বিধা করেননি চে। এরপর বাকিটা তো ইতিহাস। ১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারি তাঁদের বাহিনী রাজধানী হাভানা দখল করে। কিউবায় প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট হলেন ফিদেল কাস্ত্রো। আর চে গুয়েভারাকে প্রথমে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করেন।
এত দায়িত্ব পালনের পরেও তাঁর লেখালেখি থেমে থাকেনি। এখন পর্যন্ত বের হয়েছে ৯ খণ্ডের রচনাবলি। এসবই তিনি করেছেন ৩৯ বছরের জীবনে, যার সিংহভাগই ব্যয় হয়েছে বিপ্লব আর ভ্রমণের কাজে।
বিপ্লব যাঁর নেশা, তাঁকে কে আটকাতে পারে? তাই কিউবায় বিপ্লবের পর আবার চে বলিভিয়ায় গিয়েছিলেন আরেকটি বিপ্লবের প্রত্যয় নিয়ে। কিন্তু বলিভিয়ায় থাকার সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএর মদদপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার শহর লা হিগুয়েরায় বলিভিয়ার সেনাবাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।
তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তাঁর মুখ আঁকা টি-শার্ট, বেরেট টুপি, জুতাসহ নানা জিনিস। আর আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ফুটবলার ম্যারাডোনার হাতের বাহুর উলকিতে দেখা গিয়েছিল তাঁর প্রত্যয়ী মুখ। কবি শামসুর রাহমান, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ বিশ্বের নানা দেশের কবিরা চে গুয়েভারাকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা।