চার বছর পর বিশ্বকাপটা যখন যুক্তরাষ্ট্রে হবে, তখনো আবেদনটা হয়তো এবারের মতোই থাকবে। রাত জেগে খেলা দেখবেন সমর্থকেরা। সকাল-সন্ধ্যায় নিজের দল নিয়ে করবেন হইচই। কিন্তু একটা জায়গায় যতিচিহ্ন পড়বে নিশ্চিত। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও নেইমারকে নিয়ে গল্প-আড্ডা, আলোচনা-সমালোচনা করতে না পারার দুঃখে নিজের ঠোঁটে কামড় দিয়ে গুমড়ে মরবেন হয়তো কেউ কেউ।
এবারের কাতারের বিশ্বকাপটাকে ধরা হচ্ছে একটা যুগের সমাপ্তি হিসেবে। বয়সের কারণে দানি আলভেজ, লুকা মদ্রিচ, থমাস মুলার, রবার্ট লেভানডোভস্কিদের পরের বিশ্বকাপে দেখার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এত এত কিংবদন্তির বিদায়ী বিশ্বকাপে সব আলো তাঁদের তিনজনের ওপর। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে যেমন সমালোচনার অভাব নেই, তেমনি কমতি নেই আগ্রহেরও। সব কৌতূহলের কেন্দ্রে তাঁরা তিনজন, রোনালদো-মেসি ও নেইমার। ৩৫ বছর বয়সী মেসি যেমন জানিয়ে দিয়েছেন, শিরোপা জিতুন বা না জিতুন এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। মেসির ‘নেমেসিস’ রোনালদো মুখে কিছু না বললেও পর্তুগিজ তারকার ৩৭ বছর বয়স ইঙ্গিত করছে, যা করার তাঁকে এই কাতারেই করতে হবে। নেইমারের হয়তো আরেকটা সুযোগ থাকছে, কিন্তু ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে খেলতে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের বয়স হবে ৩৪। সেরা সময়টা থাকতে থাকতে দেশকে জেতাতে চান ষষ্ঠ বিশ্বকাপ।
২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলপ্রেমীদের শিরোপার স্বপ্ন দেখিয়েছেন মেসি-রোনালদো। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ করেছেন দুই মহাতারকা। ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনাকে তবু ফাইনালে নিতে পেরেছেন মেসি, রোনালদোর সেই সৌভাগ্যটাও হয়নি। সেই বিশ্বকাপেই নেইমার যোগ দেওয়ায় মেসি-রোনালদোর লড়াইটা বড় হয়ে রূপ নেয় ‘ফাইট অব দ্য টাইটানস’ হিসেবে। প্রতিবারই প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়েছেন তিন মহাতারকা। হাল ছেড়ে দিয়েছেন অনেক ভক্ত। তবু তিনজনের শেষ বিশ্বকাপ হওয়ায় একটাই স্বপ্ন সবার, শেষটা যেন রাঙিয়ে যান যেকোনো একজন। ভালোবাসার বিশ্বকাপ তাঁরা জিতেছেন অনেক আগেই, তবু আক্ষেপ সত্যিকারের বিশ্বকাপের। ফুটবল দেবতার বিষণ্নতায় আক্ষেপ নিয়ে যদি ক্যারিয়ার শেষ করতে হয় এই ত্রয়ীকে, তাহলে সেটা তো আসলে ফুটবলেরই পরাজয়।