‘চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, আমরা ভেবে করব কী’, ‘ঝিয়ের পেটে মায়ের জন্ম, তাকে তোমরা বলো কী’, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’, ‘জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’,...এ রকম একের পর এক বাউল গান শুনে, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন দর্শক-শ্রোতারা।
গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত, এমনই অসংখ্য গানের আসর বসেছিল জয়পুরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। এই আসরে শিল্পীরা শোনান শিকড়ের গান।
আসরের শুরুতেই বাউলশিল্পী হাসেম চিশতী বলেন, ‘সংগীত মানুষের আত্মার খোরাক। বাজার করেছি, ক্ষুধা নিবারণ করেছি; কিন্তু আমার আত্মার ক্ষুধা নিবারণ হয় নাই। তাই তো আপনারা বসে আছেন চাতক পানে। সুর দিয়ে কী হয়? সুর দিয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামানো সম্ভব। সনাতন ধর্মে বলে ‘সুর দিয়ে অসুরকে বধ করা যায়, সুর দিয়ে প্রভুর মন কেড়ে নেওয়া যায়।’
অনুষ্ঠানে এসে গান শুনে, চোখে-মুখে যেন আবেশে মুগ্ধতা ফুটে উঠেছে। এমন একজন দর্শক-শ্রোতার নাম ফরহাদ সরকার। ফরহাদ বলেন, ‘এ ধরনের অনুষ্ঠান বর্তমানে বেশি বেশি হওয়া দরকার। তাতে করে আমরা গানের মাধ্যমে সাঁইজির বাণীসহ হারিয়ে যাওয়া গানগুলো নতুন করে শুনতে পারব।’
সাগর নামের আরেক দর্শক-শ্রোতা বলেন, ‘গান যে মানুষের মনের খোরাক, আজকের বাউল গানের আসরে গান শুনিয়ে শিল্পীরা তা প্রমাণ করলেন।’
জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পীদের গানে মুগ্ধ হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘গানের মাধ্যমে শিল্পীরা কত সুন্দর সুন্দর বাণী প্রচার করছেন। এটা আমাদের বেশি বেশি করতে হবে। কারণ নতুন প্রজন্ম এই গানগুলো শোনেনি। আবার অনেকেই শোনে, কিন্তু ভেতরে নেয় না বা অনুধাবন করতে পারে না যে, এটার আসল অর্থটা কী? আমরা শিল্পীদের উৎসাহ দিতে চাই। ধর্মান্ধতাকে শুধু আইন-কানুন নীতিমালা দিয়ে হবে না। আমরা সাংস্কৃতিক আনন্দ করব। এই ধর্মান্ধতাকে রক্ষার জন্য আমরা আমাদের অস্ত্র দিয়েই রুখে দাঁড়াব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিকতা, মূল্যবোধই সবকিছু, আর মানুষ সেসব কিছুর ঊর্ধ্বে। এই লোকসংগীতের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা আরও বিকশিত হবে।’