আলুর জন্য বিখ্যাত পীরগাছা উপজেলার কৃষকেরা এবার সবজিটি চাষের শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন। দেখা দিয়েছে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সারের চরম সংকট। বেশি দাম দিয়েও মিলছে না। বীজ আলু রোপণের কাজে ব্যবহারের জন্য পটাশ সার চেয়ে কৃষকেরা প্রতিদিনই ডিলারদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চলতি মৌসুমে আলু চাষের জন্য ৭০৩ মেট্রিক টন পটাশ সারের প্রয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত ডিলাররা পেয়েছেন মাত্র ৪৫ মেট্রিক টন। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন আলু ও গমচাষিরা। আর কতিপয় ডিলার লুকিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বেশি দামে পটাশ সার বিক্রি করছেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পীরগাছায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকেরা আমন ধান কেটে নেওয়া জমি এখন আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করছেন। জমি তৈরির এই সময়ে পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। গত দুই সপ্তাহ থেকে এই সার মিলছে না।
উপজেলার নয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ১২ জন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ২৬ জন ডিলার আছেন। সব ডিলার সারের জন্য চাহিদা পাঠালেও বরাদ্দ মিলছে না।
সরেজমিনে পীরগাছা সদর, দেউতি ও গুঞ্জর খাঁ এলাকায় দেখা গেছে, মাঠজুড়ে জমি চাষ করছেন কৃষকেরা। নভেম্বরের শেষ থেকে শুরু হয়েছে বীজ আলু রোপণের ব্যস্ত সময়। কেউ কেউ সার ছিটিয়ে আলু রোপণ করেছেন। অধিকাংশ কৃষক সার না পেয়ে ঘুরছেন হন্যে হয়ে। কিছু খুচরা দোকানে পটাশ সার পাওয়া গেলেও বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। তারপরও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না।
দেউতি এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আলু চাষ করি। কখনো এ রকম সমস্যায় পড়িনি। শুরুতেই সার সংকট দেখা দিয়েছে। বাকি সময় কীভাবে যাবে জানি না। ভরা মৌসুমে সার না পেলে আলু উৎপাদন কমে যাবে আর লোকসানে পড়বে কৃষকেরা।’
সদরের অনন্তরাম এলাকার কৃষক শাহ জামাল জানান, নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সার বেশি দামে বিক্রি করেন। এতে তাঁরা লাভবান হলেও লোকসান গুনছেন চাষিরা। সরকারে উচিত আলু চাষের এই সময়ে সার ও কীটনাশকের দাম কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং মজুতকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
পটাশ সারের বরাদ্দ কম বলে জানান অন্নদানগর ইউনিয়নের ডিলার নুরুল আমিন বুলেট। তিনি বলেন, ‘আমরা সার উত্তোলনের জন্য টাকা জমা দিয়েছি। এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলেই কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, ‘অন্যান্য সারের কোনো সংকট নেই। পটাশ বরাদ্দ কম থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। প্রতিটি ডিলারের ঘরে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বসে থেকে সার বিতরণ করছেন। কোথাও কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে সার খালাস হয়নি বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’