হোম > ছাপা সংস্করণ

প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও জানা

আব্দুর রাজ্জাক

আমার একটি অভ্যাস আছে ছোটবেলা থেকেই, অপরিচিত মানুষের সঙ্গে আলাপ করে মনের ভাব আদান-প্রদান করা।

বেশ কয়েক বছর আগে আমি রিকশায় করে বাসায় ফিরতে প্রচণ্ড যানজটের মধ্যে পড়ে গেলাম, গাড়ি, রিকশা চতুর্দিকে, সবাই শুধু হাঁকডাক করছে কিন্তু যানজট ছাড়ছে না।

আমার স্বভাবমতো রিকশাওয়ালার কাছে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমাদের এই শহরে এত যানজটের কারণ কী?’

রিকশাওয়ালা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘বর্তমান ট্রাফিক পুলিশ যা করে, সেটার বিপরীত কাজটি করলে রাস্তায় কোনো যানজট থাকবে না।’

আমি বললাম, ‘যেমন?’

রিকশাওয়ালার উত্তর, ‘এখন ট্রাফিক পুলিশ আমাদের শরীরে দুটি আঘাত করে, বড়লোক যারা গাড়ি চালায়, তারা আইন অমান্য করলে ৫০০ টাকা জরিমানা করে। আমার শরীরে দুটি আঘাতে কিছু আসে যায় না, আমরা অভ্যস্ত। বড়লোক, যার গাড়ি আছে, তার ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে কোনো কষ্ট হয় না, সে ওটায় অভ্যস্ত। আমাদের রাস্তায় এই অভ্যস্ত কাজ অব্যাহত থাকার দরুন, রাস্তায় যানজট লেগে থাকে।’

একদিন এক ভাড়া করা গাড়িতে করে মিরপুর যাচ্ছি, চালক একটু বয়স্ক, কথাবার্তা শুনে ভালো মনে হলো। আমার সঙ্গে আলাপচারিতায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি এই পেশায় কত দিন?’

উত্তরে চালক বললেন, ‘এই পেশায় আসার এক বছর আগে এক বড় কর্মকর্তার গাড়িচালক ছিলাম।’ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘ওই চাকরি আপনি ছাড়লেন কেন?’

চালক বললেন, ‘স্যার, বড়লোকের কথা কিছু বুঝি না, আমার আগের সাহেব তাঁর ছেলেকে আমেরিকায় পড়তে পাঠিয়েছেন, সবার কাছে বলে বৃত্তি নিয়ে পড়তে গেছে। ঘরের মধ্যে কথা বলার সময় আমি শুনলাম, মোট টিউশন ফির পঞ্চাশ ভাগ বৃত্তি পাবে, বাকি পঞ্চাশ ভাগ নিজেদের দিতে হবে, এই পঞ্চাশ ভাগ ও থাকা-খাওয়ার জন্য বছরে ৩০ লাখ টাকার ব্যাপার।’

এরপর একটু থেমে চালক বললেন, ‘আমার স্যারের সরকারি এই পদের বেতন কত বলতে পারেন স্যার?’

আমি অজ্ঞতা পোষণ করলাম এই সম্পর্কে কিছু না বলতে পারার জন্য। চালক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘আমি স্যারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ছেলে বৃত্তি পেলে আবার টাকা পাঠানোর দরকার কী?’

তারপরেই আমার চাকরি চলে গেল।

কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয়র বাসায় নতুন একজন গৃহ সহায়িকা এসেছেন, ভদ্রমহিলা বেশ ভালো, গৃহ সহায়িকা হিসেবে বুঝেশুনে সব কাজ করেন। রান্নাবান্না, ঘর গোছানোসহ সব কাজ সুন্দরভাবে করেন। একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত সুন্দর রান্নাবান্না, এই কাজ কোথা থেকে শিখেছেন?’

উত্তরে ওই নারী বললেন, ‘আগে আমাদের গ্রামের এক সাহেবের বাসায় থাকতাম, সাহেব এবং ম্যাডামকে আগে থেকেই চিনতাম, দুজনে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। ম্যাডাম এবং সাহেবের বাড়ির অবস্থা ভালো ছিল না, সাহেবকে দুই পক্ষকেই সাহায্য করতে হয়, সাহেবের ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট, একটি গাড়ি। শুনেছি সাহেবের কানাডায়ও নাকি ফ্ল্যাট আছে, সাহেব খুব বড় চাকরি করেন। কিন্তু এই সব ফ্ল্যাট-বাড়ির কথা, গাড়ির কথা উঠলেই সাহেব বলেন, শ্বশুরবাড়ি থেকে দিয়েছে। আমি জানি, শ্বশুরবাড়িতে আমার সাহেব প্রায়ই সাহায্য করেন। স্যার, বলেন তো, আমার সাহেব কোন শ্বশুরবাড়ি থেকে এত টাকা পায়?’

এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই বলে আমি বোকা সেজে গেলাম।

বিজ্ঞজনের এই ধরনের মনের জিজ্ঞাসা সবার কাছে, এ রকম জিজ্ঞাসা আরও অনেকের মনেই জাগতে পারে। কিন্তু এই প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার উত্তর আমরা এড়িয়ে চলি, কেননা এই সমাজের উঁচু স্থানে আমাদের চলাফেরা। আমরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এই ধরনের প্রশ্ন আমাদের কেউ জিজ্ঞাসা করার সাহস পাবে না, আমরা হলাম ওপরতলার মানুষ। বিজ্ঞজনের মনের কথা মনের মধ্যে থেকেই পচে যাবে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ