ভোলার দৌলতখান উপজেলায় মেঘনা নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০ হাজার ৮৬৩ জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের পক্ষ থেকে কার্ডধারী জেলেদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। তবে অনেক জেলেই হারিয়েছেন কার্ড। আবার অনেকে সময়মতো কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেননি। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা পেতে পোহাতে হবে দুর্ভোগ।
আর যাঁদের কার্ড রয়েছে, তাঁরাও গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি বলে জানা গেছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, দ্রুতই দেওয়া হবে সহায়তা।
উপজেলা মৎস্য সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছয় শতাধিক জেলে কার্ড হারিয়েছেন। তবে কার্ড করতে সময়মতো আবেদন করতে পারেননি কতজন তা জানা নেই প্রশাসনের। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ও সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা না থাকায় জেলেরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সম্প্রতি উপজেলার জেলেপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, কাজ না থাকায় বাড়িতেই থাকছেন অধিকাংশ জেলে। তবে অনেকে অলস সময়ে নৌকা ও জাল মেরামত করে সময় পার করছেন।
সৈয়দপুর ঘোষেরহাট এলাকার জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার দুই মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এখনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে।’
ভবানীপুর মাছঘাটের জেলে দুলাল মাঝি। ৩০ বছর ধরে মাছ ধরছেন। নিষেধাজ্ঞায় কেমন কাটছে দিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে ভালো থাকি? বছরে ইলিশ পাই মাত্র দেড় মাস। এটা কি হয়? পুরো বছরটা শেষ হয়ে গেল, কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পেলাম না। সংসারের খরচ তো দূরের কথা, নৌকার ১০ জাইল্লার খরচ ওঠে না। নৌকার তেলের খরচই ওঠে না। একে তো নদীতে মাছ নেই, অন্যদিকে চলছে অভয়াশ্রম। একেকটা নৌকা বানাতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়। সে হিসাবে আমরা মাছ পাই না। মাছ একটু পাইলেই অভিযান শুরু হয়।’
এছাক মোড় ঘাটের বাবুল মাঝি বলেন, ‘সারা বছর নদীতে ইলিশের দেখা না মেলেনি। এখন নদীতে মোটামুটি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ও অভিযানের কারণে ইলিশ ধরতে পারছি না। এতে রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে মধ্যম আকারে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় পেট চালানোর কোনো উপায় নেই।’
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাচনাইন বলেন, ‘উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের সবার কার্ড রয়েছে। অনেকে কার্ড হারিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের সহায়তার জন্য জেলা মৎস্য কার্যালয় ও মৎস্য উন্নয়ন কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের কার্ড নেই, তাঁরাও সহায়তা পাবেন।’