নাটোর সদর উপজেলার উত্তর চৌকিরপাড় মহল্লা থেকে গতকাল রোববার দুপুরে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পারিবারিক কলহের জেরে তাঁদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতরা হলেন ওই এলাকার আব্দুস সাত্তারের (৩৫) স্ত্রী মাসুরা বেগম (২৫) ও তাঁদের আড়াই বছরের কন্যা শিশু মাহমুদা। এ ঘটনায় সাত্তারকে আটক করা হয়েছে। রোববার বিকেল ৪টায় সিআইডির একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশ বলছে, শনিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় শ্বাসরোধে করে হত্যা করা হয় মাসুরা বেগমকে। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে। রোববার ভোরে মাকে ঝুলতে দেখে কান্না শুরু করে আড়াই বছরের শিশু মাহমুদা। কান্না থামাতে না পেরে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাত্তার। পুরো ঘটনাটি তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ দেখে ফেলায় তাকে ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলা হয়।
এলাকাবাসী জানান, মাসুরার স্বামী আব্দুস সাত্তার শহরের কানাইখালি কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের পুরাতন শীতবস্ত্র ব্যবসায়ী। আট বছর আগে বিয়ে করেন মাসুরাকে। বিয়ের পর থেকে নানা বিষয়ে স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন সাত্তার। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। মাসুরা পরকীয়কায় লিপ্ত হয়েছেন, এমন সন্দেহ থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন সাত্তার। রোববার দুপুরে স্থানীয়রা খবর পান মাসুরা মারা গেছে। পরে তাঁরা সাত্তারের বাড়িতে যান। এ সময় সাত্তার প্রতিবেশীদের ঘরে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ এসে মাসুরার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
মনোয়ারা বেগম নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘রোববার সকালেও সাত্তার তাঁর ছেলে মোহাম্মদ উল্লাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসেন। শিশুকন্যাসহ স্ত্রীকে হত্যার পরও স্বাভাবিক আচরণ করে সাত্তার বাইরে আসেন ও বাড়িতে যান।’
মাসুরার মা আলেয়া বেওয়া বলেন, ‘মাসুরাকে দেখতে মাঝেমধ্যে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে আসলে সে (মাসুরা) নির্যাতনের কথা জানাত। তবে সন্তানদের কথা চিন্তা করে তা অন্যদের জানাতে নিষেধ করত।’
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মলয় কুমার রায় বলেন, ‘সাত্তার এলাকার কারও সঙ্গে মিশতেন না। এমনকি তাঁর বাড়িতেও কাউকে ঢুকতে দিতেন না। বদমেজাজি সাত্তার স্ত্রীকে সন্দেহ করে নানা ধরনের অপবাদ দিতেন। সাত্তারের বদমেজাজ ও অসদাচরণ নিয়ে অনেকবার অভিযোগ শুনেছি এলাকাবাসীর মুখে।’
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক জুবায়ের বলেন, ‘মা ও শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। সিআইডিসহ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। আটক সাত্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’