যে শিক্ষার্থীরা কেন এ রকম অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে? কোথায় গেল আমাদের অতীত দিনের শিক্ষককে সম্মান করার সেই সংস্কৃতি? পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে, তার মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভিন্ন প্রকৃতির। অন্য কোনো মাপকাঠিতে এই সম্পর্ক মাপার সুযোগ নেই। এর মধ্যে নিহিত থাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, শাসন ও স্নেহ। শিক্ষকদের কাছ থেকেই শিক্ষার্থীরা পায় জীবন গড়ার উপযুক্ত শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়টিতে যেন চিড় ধরেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে। এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে বিশৃঙ্খলা ও অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করে দশম শ্রেণির এক ছাত্র। দায়িত্বরত শিক্ষক ওই ছাত্রের খাতা কেড়ে নেন। এ নিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে সেই ছাত্রের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরই সূত্র ধরে শিক্ষককে চড় মারে ওই ছাত্র। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে তোলার জন্য মা-বাবার পর শিক্ষকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভালো রেজাল্ট করার উপায় বাতলে দেওয়া একজন শিক্ষকের কাজ নয়। প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও উচ্চ জীবনাদর্শের পাঠ দেওয়াও শিক্ষকের দায়িত্ব।
শিক্ষকের সব সময় শিক্ষার্থীদের কাছে পরম শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকার কথা। এ বিষয়ে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতা পড়লে যে দৃশ্য আমাদের কাছে উদ্ভাসিত হয়, সেই দৃশ্য এখন সমাজ থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এই কবিতার মতো আর নেই। সেখানে স্থান করে নিচ্ছে স্বার্থ, লোভ আর দাম্ভিকতা। এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক বৈরিতায় রূপ নেবে, যা শিক্ষা তথা সমাজের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শিক্ষার্থীরাই খারাপ হয়ে গেল, নাকি শিক্ষকেরা আজ তাঁদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন, সেটাও ভাবনার বিষয়।
শিক্ষককে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার শিক্ষা পরিবার বা পারিবারিকভাবে গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু আমাদের পারিবারিক শিক্ষায় যে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, এ ঘটনাটি তারই প্রমাণ। তাই সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মা-বাবার ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। এ জন্য শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে সম্পর্কটা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধনে মজবুত হওয়া প্রয়োজন। একজন শিক্ষক গুরু, পিতৃতুল্য—এই অনুভূতি একজন ছাত্রের ভেতরে থাকা দরকার। এই সম্পর্ক যেখানে দৃঢ়, সেখানেই শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক মধুর হয়ে ওঠে।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি হয়তো সেই ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে শাস্তি দেওয়ার চেয়ে জরুরি হলো সেই ছাত্রকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়া। কারণ সব সময় শাস্তি দিয়ে অপরাধ কমানো যায় না।