নওগাঁয় সরকারি গুদামে চলতি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে জেলার কৃষকদের কাছ থেকে ১১ হাজার ৪৫৪ টন ধান এবং ২২ হাজার ১৩৬ টন চাল কেনা হবে। প্রতি কেজি চালের দাম ৪২ ও ধানের কেজি ২৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া এই দামে উদ্বোধনের প্রথম দিনেই জেলার কৃষকেরা সরকারি গুদামে ধান সরবরাহে অনীহা দেখাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, সরকারি দরের চেয়ে খোলাবাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন তাঁরা আর মিলাররা বলছেন, ধান-চাল সংগ্রহ এবার অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে শুরুতেই হতাশ হতে চায় না খাদ্য বিভাগ। তাঁরা বলছেন, শতভাগ সততার সঙ্গে ধান-চাল সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশব্যাপী।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী নওগাঁ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা ও দিনাজপুর জেলার সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকলমালিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করতে সার ও বিদ্যুতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের দায়িত্ব তাঁদের উৎপাদিত ধানের কিছু কিছু সরকারি গুদামে দেওয়া। সরকার ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে মৌসুমের শুরুতেই ধান-চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহাদৎ হোসেন।
জেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, উপজেলার ধান সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির নির্বাচিত কৃষক তালিকা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হবে। অপরদিকে ডিজিটাল চাল সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হবে। ধান আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং চাল আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ করবে সরকার।
এদিকে সরকারের এই দামে ধান দিলে কোনোভাবেই পোষাতে পারবেন না দাবি কৃষকদের। নওগাঁ সদরের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মোটা জাতের হওয়ায় গুদামে কিছু ধান দিলাম। চিকন জাতের ধান গুদামে দেব না। কারণ খোলাবাজারে সেগুলোর দাম বেশি।’
আরেক কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির প্রশ্নই ওঠে না। খোলাবাজারে দাম অনেক বেশি। এ ছাড়া গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক ঝামেলা সহ্য করতে হয়।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ধান-চালের বাজার সমন্বয় করার দাবি মিলারদের। বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, বর্তমান বাজারের সঙ্গে সরকারের বেঁধে দেওয়া চালের দর সঠিক হয়নি। ৪২ টাকা নয়, অন্তত ৪৫ টাকা দিতে হতো।
রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফারুখ হোসেন বলেন, ‘সংগ্রহ অভিযানের যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আশা করছি সবই মোকাবিলা করা হবে।’