পীরগাছা উপজেলার অবহেলিত এক গ্রাম চর তাম্বুলপুর। গ্রামটির পূর্ব দিকে তিস্তা আর উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে বুড়াইল নদী। দুই নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন এ গ্রামের বাসিন্দারা যেন নিজভূমে পরবাসী। দীর্ঘ দিনেও সেখানে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।
উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্বে তাম্বুলপুর ইউনিয়নের এই গ্রামে প্রায় ২ হাজার পরিবারের বসবাস। গ্রামটিতে লেখাপড়া জানা মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। অধিকাংশ বাসিন্দাই দিনমজুর ও কৃষিশ্রমিক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৮ সালের প্রবল বন্যায় তিস্তার ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে চর জেগে পলি পড়ে ধীরে ধীরে জনপদ গড়ে উঠে।
সম্প্রতি সরেজমিনে চর তাম্বুলপুরে চোখে পড়ে বাসিন্দাদের করুন চিত্র। গ্রামটিতে প্রবেশ বা যাতায়াতে নেই কোনো ভালো রাস্তাঘাট। বুড়াইল নদীর ওপর একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোই গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা। এটি পাড়ি দিয়ে তাম্বুলপুর বাজার থেকে সাহেব বাজার সড়কে চলাচল করতে হয়।
গ্রামের কিছু বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও অন্যরা এখনো তা পাননি। গড়ে ওঠেনি বিশুদ্ধ পানীয় জলসহ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। অতিবৃষ্টি বা বন্যায় পুরো গ্রাম নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। তখন পানিবন্দী হয়ে পড়েন এ গ্রামের মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানান, এখানে কোনো দাতব্য কিংবা সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবার জন্য কোনো চিকিৎসক পান না। গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসক বা কবিরাজই তাঁদের একমাত্র ভরসা।
গ্রামের বাসিন্দা আমির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নিজভূমে যেন পরবাসী। শুধু ভোটের সময় বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের দেখা গেলেও পরে আর দেখা মেলে না। সবাই ভুলে যায় আমাদের।’
তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন জমির রবু সরদার বলেন, নদীবেষ্টিত গ্রামগুলোর অনেক সমস্যা। তবু চেষ্টা চলছে ওই গ্রামটিকে আধুনিকায়ন করার। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগসহ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্রামটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, তাম্বুলপুর বাজার থেকে সাহেব বাজার সড়কটি পাকাকরণ এবং নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।